Thank you for trying Sticky AMP!!

নারীদের প্রতিটি স্টল যেন একেকটি গল্প

হোসনে আরা আরজু। বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। ২০০৪ সাল থেকে নারীদের উন্নয়নে কাজ করছেন। শুরুটা হয়েছিল নগদ ৫ হাজার টাকা, পাঁচজন নারী ও একটি সেলাই মেশিন নিয়ে। বর্তমানে তাঁর সঙ্গে ৬৫ জন নারী কাজ করছেন। শিশু ও নারীদের পোশাক, খেলনা, ঘর সাজানোর নানা জিনিস তৈরি করেন। নিজের একটি বিক্রয়কেন্দ্র হয়েছে। পুঁজি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ টাকায়। পেয়েছেন জয়িতার সম্মান।

জাহানারা বেগম (৪৫) কাজ করেন প্রতিবন্ধী ও হিজড়াদের নিয়ে। ১০ বছর আগে এক প্রতিবন্ধী মায়ের কষ্ট দেখে শুরু। পুঁজি কিছুই ছিল না। প্রবল ইচ্ছাশক্তি দিয়ে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি হিজড়া ও প্রতিবন্ধী মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ১০০ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। তাঁদের দিয়ে বিভিন্ন পোশাকে নকশা করান। পরে সেগুলো বাজারজাত করেন। ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি পৃথক আবাসন তৈরির চিন্তা করছেন তিনি।

উদ্যমী এই দুই নারী পাবনায় চলমান মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস (মাইডাস) বাণিজ্য মেলায় স্টল দিয়েছেন। তবে শুধু তাঁরাই নন; মাইডাস আয়োজিত এ মেলায় এমন ৩১ জন নারী উদ্যোক্তার স্টল রয়েছে। প্রতিটি স্টলের পেছনেই যেন রয়েছে একেকটি স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প।

হোসনে আরা আরজু বলেন, কাজ করতে পুঁজি কোনো বিষয় নয়। নারী হওয়াটাও কোনো বাধা নয়। ইচ্ছাশক্তিটাই আসল। সাহস করে শুরু করলে একদিন উঠে দাঁড়ানো যায়। আর কাজটাকে ভালোবাসা দিয়ে ধরে রাখতে হয়। তবে স্বাবলম্বীও হওয়া যায়।

একই কথা বলেন ঢাকা থেকে আসা সাইকাস হেরিটেজের মালিক রেবেকা সুলতানা। মা ভালো সেলাই করতেন। তাঁর কাছ থেকেই তিনি সেলাই শেখেন। এরপর নিজে কিছু করার চেষ্টা। শুরুটা হয় ১০ বছর আগে। নিজে হাতে পোশাক তৈরি করে নিজের বাসাতেই বিক্রি করতেন। বর্তমানে পরিসর অনেক বড়। অনলাইনে পোশাকের বিশাল বাজার তৈরি করেছেন। বিক্রি ভালো হচ্ছে। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার পাশাপাশি সময়টাও ভালো কাটছে বলে মন্তব্য এই নারীর।

জান্নাতুল ফেরদৌস সবে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন। বেকার বসে ভালো লাগছিল না। তিনি মেলায় পিঠাপুলিসহ বিভিন্ন খাবার স্টল সাজিয়ে বসেছেন। মুখরোচক এসব খাবার বিক্রিও হচ্ছে ভালো।

জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম আলোকে জানান, পাড়া-মহল্লায় বহু নারী সুন্দর ও মুখোরোচক খাবার তৈরি করেন। যা ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তাই তিনি এসব খাবার সংগ্রহ করে মানুষের মধ্যে উপস্থাপন করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন। অনলাইনভিত্তিক একটি সাইট তৈরি করে এসব খাবার উপস্থাপন ও বিক্রি করবেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে পাস করেছেন সুমাইয়া তাসনিম। তিনি চাকরি না খুঁজে নিজে কিছু করতে চান। মেলায় নিজের ছবি নিয়ে একটি স্টল দিয়েছেন। সুমাইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছবি আঁকতে আমার ভালো লাগে। তাই ছবি নিয়ে জীবন গড়তে চাই। মেলায় এসে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। মানুষ ভালো ছবি কিনতে চায়। তাই আমি নিজের ছবি নিয়ে অনলাইনে একটি দোকান খুলতে যাচ্ছি।’

৯ বছর আগের এক মজার গল্প স্বাবলম্বী করেছে মহসিনা খাতুনকে। মাত্র ৬০০ টাকা দিয়ে নিজের জন্য একটি জমা কিনেছিলেন তিনি। এক আত্মীয় সেটা পছন্দ করে ৭৫০ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিলেন। দেড় শ টাকার এই লাভ তাঁকে ঠেলে দিয়েছিল ব্যবসার দিকে। এখন তিনি নিজের কারখানাতেই পোশাক তৈরি করছেন। কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন ১৬০ জন নারীর।

মহসিনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরুর গল্পটা হাস্যকর হলেও সেই গল্পই আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। নিজে ব্যবসা করছি, অন্যদের কর্মসংস্থান করেছি। নিজের কাছেই এখন ভালো লাগে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন মেলা ঘুরে প্রতিটি স্টলেই মিলেছে এমন নানা গল্প। কেনাকাটার পাশাপাশি অনেকেই ফিরছেন নানা অনুপ্রেরণা নিয়ে।

এ প্রসঙ্গে মাইডাসের চেয়ারম্যান ও স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মাইডাস নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছে। তাঁদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছে। নারীরাও সফল হচ্ছেন। মাইডাসের এই পণ্য মেলায় এই সাফল্যেরই কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে।