Thank you for trying Sticky AMP!!

নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা, দেশে এসে গরুর খামারি

বিদেশে পড়াশোনা করে এসে গরুর খামার করে সফল হয়েছেন বগুড়ার তৌহিদ পারভেজ। শ্রমিকদের পাশাপাশি নিজেই খামারে গরুর যত্ন নেন। সম্প্রতি কাহালু উপজেলার দরগাহাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে। ২০০৭ সালের কথা। পড়ার ফাঁকে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াতেন আর জীবজন্তুর ছবি তুলতেন। আরেকটি নেশা ছিল তাঁর—গরুর খামারে খামারে ঘুরে বেড়ানো। বিশাল সব গাভি দেখে বিস্মিত হতেন। এগুলো কীভাবে লালন-পালন করা হয়, খামারিদের কাছ থেকে সে গল্প শুনতেন।

ঝোঁকটা তখন থেকেই মাথায় ঢোকে। দেশে ফিরে ২০১১ সালে সাতটি এঁড়ে বাছুর কিনে নিজেই একটি গরুর খামার দিয়ে বসেন। বিদেশে পড়ে এসে গরুর খামারি! শুরুতে পরিবারের লোকজন বিষয়টাকে ভালোভাবে নেননি, কিন্তু তৌহিদ পারভেজ অন্য ধাতে গড়া। তাঁর সহপাঠীরা যখন ভালো চাকরির স্বপ্ন দেখেন, তিনি তখন চাকরি দেওয়ার, একজন উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবতেন।

সেই ভাবনা থেকেই গড়ে তুলেছেন বগুড়া ভান্ডার ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড। ৪৫ বিঘা জমির ওপর ধান ও বিদেশি জাতের ঘাসের চাষ আর গরুর খামার দিয়ে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর কারখানা ও খামারে কাজ করেন দেড় হাজার শ্রমিক। করোনা মহামারির সময় গোটা দেশে কাজের জন্য যখন হাহাকার, অনেকে চাকরি হারাচ্ছেন, পুঁজি খোয়াচ্ছেন তখন বগুড়ার কাহালুর কয়েকটি গ্রামের মানুষ তৌহিদ পারভেজের খামারে দিব্যি কাজ করছেন।

তুষ্টির কথা শোনা গেল খামারের নারীশ্রমিক জহুরা বেগমের (৪০) কণ্ঠে। বললেন, ‘করোনাত হামাকেরে গেরামজুড়ে সগলি খুব কষ্ট করিচে। কাম নাই, কামাই নাই। ভাতের চুলাও জ্বলেনি কারও কারও। হামাকেরে কোনো কষ্ট হয়নি। খামারত কাম করিচ্চি, মাস শ্যাষে ৯ হাজার ৫০০ টেকা লগদ বুঝে পাচ্চি। উল্টা ছলডা (তৌহিদ) করোনাত দুই মাস কারখানার সগলিসহ হামাগরক ইলিপ দিচে, বকশিস দিচে।’

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা

তৌহিদ পারভেজকে (৩৫) লোকে বিপ্লব নামে বেশি চেনে। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পাঁচকাতুলি গ্রামে বাড়ি। এখন থাকেন বগুড়া শহরের সূত্রাপুর ঘোড়াপট্টি লেনে। বাবা তোফাজ্জল হোসেনের জুট মিল, হিমাগার, আমদানি-রপ্তানিসহ নানা ব্যবসা আছে।

ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ব্যবসায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের জন্য নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন। পড়েছিলেন অকল্যান্ড ইনস্টিটিউট অব স্টাডিজে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস নিয়ে। ২০১০ সালে দেশে ফিরে শুরুতে আটা-ময়দার কারখানা (অটো ফ্লাওয়ার মিল) দেন। বছরখানেক পরে চার লাখ টাকায় সাতটা এঁড়ে বাছুর কিনে শুরু করেন খামার। পরের গল্পটা সাফল্য আর অনুপ্রেরণার। তাঁর খামারে এখন দেশি-বিদেশি জাতের গরু আছে ৯১টি। গত বছরের কোরবানির ঈদে খামারের গরু বিক্রি করে লাভ করেছেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

তৌহিদের অটো ফ্লাওয়ার মিল ও কৃষি খামারটি বগুড়ার কাহালু উপজেলার দরগাহাট এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে। গরুর খামার কেন করলেন—জানতে চাইলে তৌহিদ বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল পুকুরে মাছ চাষ আগে শুরু করব। চাষাবাদের সঙ্গে ফলদ বাগান করব। কিন্তু শুরু করলাম ময়দার মিল দিয়ে। মিল থেকে ভুসি ছাড়াও গমের একধরনের খুদ বা পশুখাদ্যের উপযোগী বর্জ্য জমা হয়। এসব বর্জ্য কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটার উপায় খুঁজছিলাম। সময়টা ২০১০ সাল। সে বছরের কোরবানির ঈদে বাবার সঙ্গে হাটে গিয়ে একটা নাদুসনুদুস গরু কিনলাম। মাংস রান্নার পর মুখে দিয়ে বোকা বনে গেলাম। খালি চর্বি, স্বাদ নেই। বুঝলাম, বেশি লাভের আশায় অল্প সময়ে অসৎ উপায়ে মোটাতাজা করা হয় গরুটিকে।

সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজের পছন্দমতো পশু কোরবানির জন্য গরু পালন করব। ময়দা কারখানার ভুসি আর পশুখাদ্যের উপযোগী বর্জ্য কাজে লাগাতেই ছোট পরিসরে গরুর খামার করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’

খামারে চার শ্রমিক ও এক পশু চিকিৎসক থাকলেও তৌহিদ প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরুর খোঁজখবর নেন। ঘন ঘন খামারে গিয়ে নিজেই দেখভাল করেন। গরুর তাপমাত্রা, ওজন—এসব পরীক্ষা করেন। কোনো সমস্যা মনে হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। খামারে ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল ও দেশি জাতের ৩৫টি গাভি ছাড়াও দেশি-বিদেশি জাতের মোটাতাজা এঁড়ে গরু ৫০টি। বাছুর আছে ছয়টি। ৬টি গাভি থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ লিটার দুধ হয়। প্রতি লিটার দুধ ৪০ টাকা দরে খামার থেকেই বিক্রি হয়ে যায়।

তৌহিদ সম্পর্কে বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তালুকদার বললেন, বিদেশে পড়াশোনা করে গরু মোটাতাজা ও দুগ্ধখামার গড়ে সফলতা পেয়েছেন তৌহিদ। তিনি এখন এলাকার শিক্ষিত বেকার তরুণ-যুবকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।