Thank you for trying Sticky AMP!!

‘নৌকার বিপক্ষে ভোট চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না’

নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম তপাদার

শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে ভোট চাওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম তপাদার। গতকাল সোমবার রাতে একটি নির্বাচনী জনসভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। নৌকার ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর পক্ষে যে ভোট চাইবেন, তাঁকে অবরুদ্ধ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে আছেন। তাঁর ওই জনসভায় দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আবুল হাসেমের দাবি, তাঁর বক্তব্য ‘এডিট’ করা হয়েছে।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, ১১ নভেম্বর সদর উপজেলার ১০টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সদরের ডোমসার ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মিজান মোহাম্মদ খান। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো কমিটির সদস্য নন। আর মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মজিবুর রহমান।

সোমবার রাতে ডোমসারের ভর্তাইসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিজান মোহাম্মদ খানের একটি নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম তপাদার।

সেই বক্তব্যের ৬ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আবুল হাসেমকে বলতে শোনা যায়, ‘এই মিটিংয়ের পরে আপনার প্রস্তুত হয়ে থাকেন, আমরা নির্বাচন জানি। নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী মজিবুরের পক্ষে যে ভোট চাবে, কালকের থেকে তাদের তালিকা করে আমাকে দেবেন। তালিকা দেবেন। আমি এ জনসভায় বলতে চাই, যে যে ভোট চাবেন মজিবরের পক্ষে, নৌকার বিপক্ষে তালিকা করে দেবেন। সমস্ত দায়দায়িত্ব আমরা নেব। এই মঞ্চের নেতৃবৃন্দ নেবেন। কোনো ভোট চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। আমার কথা পরিষ্কার।’

আবুল হাসেম আরও বলেন, ‘আমার মাননীয় সংসদ সদস্য, আমার মধ্যে তাঁর চুল পরিমাণ বিভক্তি নাই। আমি যা বলি, তিনি তা করেন, তিনি যা বলেন, আমি তা শুনি। আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমরা চাই, তিনজন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা চাই, এই ডোমসারের মাটিতে কোথাকার মজিবুর, আমি চিনি না বিদ্রোহীকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নেতা যেখানে, কর্মীরা সেখানে। কর্মী যেখানে, ভোট সেখানে। কর্মী নাই, ভোট নাই। তোর নেতা নাই, কর্মী নাই—ভোট কোথায়? একটা কর্মী ঘরে বসে থাকবেন না, আমরা হুকুম দেওয়ার সাথে সাথে—কোথাকার মজিবুর, কে—ওরেসহ ভোট চাইতে দেওয়া হবে না। হবে না, হবে না।’

জীবন দিয়ে হলেও শেখ হাসিনার নৌকাকে বিজয়ী করার কথা উল্লেখ করে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘হুঁশিয়ার হয়ে যাবেন যারা যারা, এখনো ঠিক হয়ে যান। তিন দিন সময়ের মধ্যে আমরা মিটিং করে ঘোষণা দিয়ে দেব। ডোমসারের ৯ ওয়ার্ড, রাস্তাঘাট, যেখানে পাওয়া যাক, নৌকার বিপক্ষে যে ভোট চাবে, আমাকে তালিকা দেবেন। আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেব। মিটিংয়ের পরে সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা মঞ্চের সবাই সিদ্ধান্ত দেব। সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নাই। সিদ্ধান্তের বাইরে নেতা-কর্মীরা যাবেন না। যখনই সিদ্ধান্ত দেব, তখনই রাস্তাঘাটে এদেরকে অবরুদ্ধ করা হবে।’

এসব কথা আমি বলিনি। এখন তো কত কিছুই এডিট করে বসানো যায়। এ অভিযোগ সত্য নয়।
আবুল হাসেম তপাদার, শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিজান মোহাম্মদ খান উপজেলা চেয়ারম্যানের আত্মীয়। তিনি কখনোই আওয়ামী লীগ করেননি। উপজেলা চেয়ারম্যানের চেষ্টায় তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। এমন ক্ষোভের কারণে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা নৌকার পক্ষে মাঠে নামছেন না। সেই ক্ষোভ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান এমন বক্তব্য দিয়েছেন।

জানতে চাইলে আবুল হাসেম তাপাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব কথা আমি বলিনি। এখন তো কত কিছুই এডিট করে বসানো যায়। এ অভিযোগ সত্য নয়। কেউ হয়তো বাড়তি কথা জুড়ে দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে।’

ডোমসার ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাকে ও আমার কর্মীদের নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে দিচ্ছে না। আমার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছিল। প্রকাশ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাংসদ হুমকি দিচ্ছেন।’

সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ডোমসার ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হুমকি দেওয়ার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।