Thank you for trying Sticky AMP!!

নয়টি গ্রামে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের নয়টি গ্রামে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে এসব গ্রামের শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামের খাইরুল ইসলাম (৫০) নামের এক কৃষক মারা গেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ধরমপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ এপ্রিল থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের শিশু, নারী, পুরুষসহ ২৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যাই বেশি। এই হাসপাতালে বহির্বিভাগে গড়ে ২৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, এই হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রোগীর চাপ বেশি। হাসপাতালের নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে যারা ভর্তি আছে, তাদের অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়ায় বারান্দায় বিছানা পেতে শুয়ে ছিল চারজন। তাঁদের মধ্যে দুজনই সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন গাজীনগর গ্রামের রট মিয়া (৬০) ও হাইকুল মিয়া (১৩)। রট মিয়ার মেয়ে স্বর্ণা আক্তার বলেন, ‘আমরার গ্রাম সব মিলাইয়া ৩০-৩৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অইছে।’

সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের যে নয়টি গ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে, সেগুলো হচ্ছে রহমতপুর, দয়ালপুর, তাহিরপুর, মাহমুদনগর, রংপুর হাটি, আগলাহাটি, দক্ষিণ হাটি, নয়াহাটি ও গাজীনগর। কোন গ্রামের কতজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। তবে গত এক সপ্তাহে এসব গ্রামে শতাধিক ব্যক্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রহমতপুর গ্রামের কৃষক খাইরুল ইসলাম গত বুধবার দুপুরে মারা যান।

সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউপির চেয়ারম্যান আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, এই ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো নয়। আবার এলাকার বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না।

ইউনিয়ন সদর রাজাপুর বাজার থেকে ধরমপাশা উপজেলা শহরের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। যোগাযোগব্যবস্থা খুবই খারাপ। বেশির ভাগই মাটির রাস্তা। যানবাহন বলতে মোটরসাইকেলই ভরসা। ইজিবাইক চলে কদাচিৎ। তা–ও সব এলাকায় চলে না। আবার এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়। ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও অনেকেই স্থানীয় চিকিৎসার ওপরই নির্ভর করছে। অবস্থা খুবই খারাপ হলেই কেবল হাসপাতালে যাওয়ার চিন্তা করছে তারা। এ অবস্থায় সরকারিভাবে ইউনিয়নে চিকিৎসাশিবির করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবা দেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর। তা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।

ধরমপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা সাদবীর জামান বলেন, ‘সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির খবর আমরা পেয়েছি। স্বাস্থ্য বিভাগের একটি দল বৃহস্পতিবার সকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত গ্রামগুলো পরিদর্শন করেছে। আক্রান্ত রোগীদের ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি ডায়রিয়ার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।’ এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে এক সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আসছে জানিয়ে সাদবীর জামান বলেন, আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু। কয়েক দিন ধরে অতিরিক্ত গরম পড়েছে। এতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বেড়ে গেছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং বাসি খাবার ও দূষিত পানি গ্রহণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।