Thank you for trying Sticky AMP!!

পটুয়াখালীতে বাঁধ না থাকায় ফসলের ক্ষতি

কৃষক দেলোয়ার খান (৫০) প্রতিবছরই আগাম আমন ও তরমুজের চাষ করেন। এ বছর তিনি ৯ একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে তাঁর আমন খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খেতের অনেক স্থানের ধানগাছ মাটিতে পড়ে গেছে। খেতে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে গাছে পচন ধরায় বাধ্য হয়ে তাঁকে আধা পাকা ধান কেটে নিতে হচ্ছে।
কৃষক দেলোয়ার খানের বাড়ি পটুয়াখালী রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামে। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই গ্রামের কৃষক শাহীন মুফতী (৪৫)। তিনি ১০ একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। ঝড়ে তাঁর সাড়ে পাঁচ একরের ধান ক্ষতিগ্রস্ত। শাহীন মুফতী বলেন, ‘আমরা আগুনমুখা নদীভাঙনের শিকার। বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের সময় পানি বৃদ্ধি পেলেই ফসলের খেত ডুবে যায়।’
গত শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ পটুয়াখালীর ওপর দিয়ে বয়ে যায়। নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে জেলার আট উপজেলায় আমন খেত কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে খেসারিখেত। শাকসবজির খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় মোট ২ লাখ ২১ হাজার ৭৩০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। টাকার অঙ্কে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৭২ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

 ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর।
রবিশস্যের মধ্যে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে খেসারির আবাদ হয়েছিল, যা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলায় মোট ২ লাখ ২১ হাজার ৭৩০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
খেত থেকে পানি দ্রুত সরে গেলে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ কমতে পারে।

গত মঙ্গলবার সকালে গলাচিপার আমখোলা ইউনিয়নের দড়িবাহের চর গ্রামে দেখা যায়, বেশির ভাগ খেতের ধান মাটিতে পড়ে আছে। গ্রামের কৃষক মনির প্যাদা (৩০) জানান, নদীর পাড়েই তাঁর ধানের খেত। তরমুজে লাভ হয় বেশি। তিনি তিন একর জমিতে আগাম আমনের আবাদ করেছিলেন। গাছ থেকে শিষ বের হচ্ছে। এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত। এক একর জমির ধান পড়ে গেছে। ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের উত্তর আউলিয়াপুর গ্রামে দেখা যায়, কাসেম হাওলাদার (৪০) নামের এক কৃষক হাঁটুপানিতে ধান কেটে তুলছেন। তিনি জানান, খেত থেকে পানি সরেনি। ধানে চিটা ধরে যাবে। তাই গরুর খাদ্য হিসেবে গাছ কেটে ফেলছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ২ লাখ ২ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর। রবিশস্যের মধ্যে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে খেসারির আবাদ হয়েছিল, যা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া ১৮০ হেক্টর খেতের শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। জেলায় মোট ২ লাখ ২১ হাজার ৭৩০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপপরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে জেলায় ফসলের কিছু ক্ষতি হয়েছে। রবিশস্যের মধ্যে খেসারি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে ক্ষতি বেশি। খেত থেকে পানি দ্রুত সরে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমতে পারে।