Thank you for trying Sticky AMP!!

পথের কুকুরকে বাঁচাতে...

একটি কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু হাসপাতালে। সংগৃহীত

প্রথমেই স্ট্রেচারের ওপর শুয়ে দেওয়া হলো কুকুরটিকে। এরপর শুরু হলো অস্ত্রোপচার। কেউ ব্যস্ত ছুরি-কাঁচি নিয়ে। কেউবা ধরে রেখেছেন কুকুরের পা, কেউবা মুখ। অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার পর চিহ্ন হিসেবে কানে দেওয়া হচ্ছে ছোট্ট ছিদ্রের আঁচড়। পরে খাঁচায় রেখে পরম মমতায় খেতে দেওয়া হচ্ছে মাংসের টুকরা আর ওষুধ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) পশু হাসপাতালে এই চিত্র দেখা গেছে।

এই কুকুরগুলোর পরিচিতি ‘পথকুকুর’। বাংলাদেশে জলাতঙ্কের প্রধান বাহক বলা হয় এই পথকুকুরগুলোকেই। ফলে একদিকে এই কুকুরগুলো জীবনহানিকর রোগ ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের ভীতির কারণে এই কুকুরগুলো নিষ্ঠুরতারও শিকার হচ্ছে। এ জন্য পথকুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলাতঙ্ক রোগের টিকা দিতে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিভাসু।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি ও প্রাণিকল্যাণ বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ রাশেদুল আলমের নেতৃত্বে সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তুলি দেসহ একদল শল্যচিকিৎসক এই প্রকল্পের অধীনে কাজ করছেন। মূলত পথকুকুরগুলোকে হত্যা না করে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং রোগমুক্ত করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হলেই এসব কুকুরকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে নিজের জায়গায়।

সিভাসু সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে তিন লাখ টাকায় এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত জুনের শুরুতে কাজ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বেড়ে ওঠা পথকুকুরগুলোকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। এ প্রকল্পের মূলনীতি হচ্ছে, ‘সিএনভিআর’। অর্থাৎ ‘ক্যাপচার (কুকুর ধরা)’, ‘নিউটার (বন্ধ্যাকরণ) ’, ‘ভ্যাকসিন (জলাতঙ্ক টিকা) ’ এবং ‘রিলিজ (মুক্তি) ’। এর মাধ্যমে পুরুষ ও মাদি কুকুরকে স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের পাশাপাশি জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

১৮ কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ ও টিকা

এ পর্যন্ত ১৮টি কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ ও জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেওয়া হয়েছে। পুরুষ কুকুরের বন্ধ্যাকরণে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। অন্যদিকে মাদি কুকুরকে বন্ধ্যাকরণে সময় এক ঘণ্টা বেশি লাগে। বন্ধ্যাকরণ শেষে কুকুরগুলোকে সার্জারি পরবর্তী চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

এই সময় কুকুরগুলোকে দিনে তিন বেলা খাবার খেতে দেওয়া হয়। একটু সুস্থ হয়ে উঠলেই দেওয়া হয় জলাতঙ্ক রোগের টিকা। পুরুষ কুকুরকে পাঁচ দিন এবং মাদি কুকুরকে সাত দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পঞ্চগড় থেকে আনা দুজন দক্ষ ব্যক্তি কুকুরগুলোকে ধরার কাজ করছেন।

জানতে চাইলে প্রকল্প দলের প্রধান মোহাম্মদ রাশেদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আগে বছরের একটা সময়ে পথকুকুরগুলোকে ধরে মেরে ফেলা হতো। কিন্তু এভাবে হত্যা করা সমাধান নয়। প্রাণিকল্যাণ আইন অনুযায়ী এভাবে হত্যায় জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। তাই হত্যা না করে কুকুর নিয়ন্ত্রণ ও জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেওয়াই একমাত্র সমাধান।

প্রাথমিকভাবে সিভাসু ক্যাম্পাসে বাস করা কুকুরগুলোকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান রাশেদুল আলম। তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ক্যাম্পাসের সব কুকুরের বন্ধ্যাকরণ সম্পন্ন করা হবে। সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিলে পুরো নগরের পথকুকুরগুলোকে নিউটারিং অ্যান্ড ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের আওতায় আনতে পারব।’