Thank you for trying Sticky AMP!!

পদ্মার পানি বাড়ছে, ডুবছে চরের গ্রাম

পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় চরের গ্রামগুলো ডুবতে শুরু করেছে। চর তারা নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অঙ্গনেও পানি জমতে শুরু করেছে। চর তারা নগর, রাজশাহী, ৩০ সেপ্টেম্বর। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ১১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। আজ সন্ধ্যায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মা নদী বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

পানি বাড়ার কারণে রাজশাহীর জেলার চরাঞ্চলের গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। পবা, বাঘা ও গোদাগাড়ীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাজশাহীর চরখিদিরপুরে প্রথম আলো ট্রাস্টের আলোর পাঠশালার মাঠ আজ পানিতে ডুবে গেছে।

এদিকে ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশে বন্যার কারণে ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত। স্থানীয় লোকজনের দাবি, এ জন্য রাজশাহীতে পদ্মায় পানি বাড়ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রবল বৃষ্টির কারণেই পদ্মায় পানি বাড়ছে। তবে উজানের পানিও আসছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এ বছরে গত আগস্ট মাসে পদ্মার পানি দ্বিতীয়বারের মতো বেড়েছিল। তখন রাজশাহীর দরগাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৬ দশমিক ৭১ মিটার উঠেছিল। তারপর থেকে কমে যায়। ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ফের পানি বাড়া শুরু হয়েছে। ওই সময় পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৩৯ মিটার। গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেল তিনটায় পদ্মার পানি উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ২০ মিটার। তারপর ধীরে ধীরে পদ্মা নদীর পানি বাড়তে থাকে। শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রোববার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বেড়েছিল। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে যায়।

চরের গ্রামগুলোর বসতবাড়ি এখন পানিতে থইথই অবস্থা। চরখিদিরপুর, রাজশাহী, রাজশাহী, ৩০ সেপ্টেম্বর। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে সবশেষ ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। তখন পানি ১৮ দশমিক ৭০ মিটার উচ্চতায় উঠেছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ফারাক্কার গেট খুলে দিলে সেই পানি বাংলাদেশের পাঙ্খা পয়েন্ট থেকে রাজশাহীতে ভরা মৌসুমে প্রায় ছয় ঘণ্টার মধ্যে চলে আসে। পাঙ্খা থেকে রাজশাহীর দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

ফারাক্কার সব গেট খুলে দেওয়ার খবর ভারতীয় প্রায় সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, গেট খোলা হয়েছে কি না সেটা তাঁরা বলতে পারবেন না। তাঁদের কাছে এ রকম কোনো তথ্য নেই।

প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে রোববার সকাল নয়টা থেকে সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে হয়েছে ৫৪ মিলিমিটার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে হয়েছে ৬৮ মিলিমিটার। এসব বৃষ্টির পানি নদীতে জমা হয়েছে। এসব কারণে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে প্রবল বৃষ্টির কারণেই বাড়ছে পদ্মার পানি। তবে স্থানীয়রা বলছে, ফারাক্কার সব গেট খুলে দেওয়া পদ্মায় পানি বাড়ছে। চরখিদিরপুর, রাজশাহী, রাজশাহী, ৩০ সেপ্টেম্বর। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে গত দুই সপ্তাহের পানি বাড়ার কারণে রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুর ও মধ্যচরে বন্যা ও নদীভাঙন শুরু হয়েছে। মধ্যচরে পদ্মায় তীব্র ভাঙনে আড়াই শ পরিবারের ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানা গেছে।

একই অবস্থা হয়েছে রাজশাহী বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই পানিতে তালিয়ে গেছে। ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল আযম জানান, তাঁর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে সেখানকার প্রায় ১২০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়েছে। তাঁর ইউনিয়নে মোট ৩ হাজার ৬০০ পরিবারের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ পরিবার এখন জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানি দ্রুত আরও বাড়ছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউপির চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর ইউনিয়নের পদ্মার ভাঙনে মধ্যচর এবার একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। আর চরখিদিরপুরের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শতভাগ পরিবার জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।