Thank you for trying Sticky AMP!!

পাতে ফিরছে পিয়ালি

দীর্ঘ গবেষণা করে দেশে প্রথমবারের মতো পিয়ালির প্রজনন ও পোনা উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা

একসময় পদ্মা ও যমুনায় পিয়ালি মাছ পাওয়া যেত প্রচুর। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয় ও অতি আহরণের ফলে এ মাছ এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে সুখবর নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘ গবেষণা করে দেশে প্রথমবারের মতো পিয়ালির প্রজনন ও পোনা উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

পিয়ালি মাছ দৈর্ঘ্যে ৫ থেকে ১৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাছগুলো চ্যাপ্টা আকৃতির। পরিপক্ব পুরুষ মাছের পেট হলুদাভ এবং স্ত্রী মাছের চেয়ে আকারে বড়। স্ত্রী মাছের পেট ধবধবে সাদা ও হালকা স্ফীতকায়। প্রতিবছর এ মাছের শরীরের আঁচিল ঝড়ে যায় ও নতুন আঁচিল তৈরি হয়। সুস্বাদু এই মাছ বর্তমানে বাংলাদেশের সংকটাপন্ন মাছের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মাছটি নিয়ে গবেষণা শুরু করে। যমুনা, বাঙ্গালী, আত্রাইসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পিয়ালি মাছের পোনা সংগ্রহ করে বগুড়ার সান্তাহার উপজেলায় প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের পুকুরে ছেড়ে দিয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, মে থেকে আগস্ট এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে নদীতে প্রজননক্ষম পরিপক্ব স্ত্রী মাছ পাওয়া যায় এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জলাশয়ে পিয়ালির পোনার উপস্থিতি মেলে। পিয়ালি মাছের ডিম ধারণক্ষমতা আকার ভেদে দেড় হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার।

বিলুপ্তপ্রায় ছোট মাছ নিয়ে গবেষণা করছেন মৎস্যবিজ্ঞানীরা। তারই ধারাবাহিকতায় পিয়ালী মাছের জাত পুনরুদ্ধার এবং প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে

গবেষক দলের প্রধান ডেভিড রিন্টু দাস জানান, পিয়ালি মাছ দ্রুত বর্ধনশীল ও খেতে খুবই সুস্বাদু। এই মাছ আমিষ, চর্বি, ক্যালসিয়াম ও লৌহসমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম পিয়ালি মাছে মেথিয়োনিন ৭৫০ মিলিগ্রাম, সিস্টিন ৪২০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪৩০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬৭০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৫০ মিলিগ্রাম, জিংক ১২.৮ মিলিগ্রাম, আয়রন ২৫ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ৮.২১ মিলিগ্রাম এবং ১.৪০ শতাংশ কপার রয়েছে, যা অন্যান্য অনেক দেশীয় ছোট মাছের তুলনায় অনেক বেশি। মানবদেহে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব পূরণ, রাতকানা প্রতিরোধ, লৌহের ঘাটতি পূরণে এই মাছ অত্যন্ত কার্যকর।

পিয়ালি মাছ এলাকা ভেদে জয়া, পিয়ালি বা পিয়াসি নামে পরিচিত। গবেষক দলের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা খানম জানান, এর বৈজ্ঞানিক নাম Aspidoparia Jaya. মাছটি সাইপ্রিনিডি (Cyprinidae) পরিবারভুক্ত মিঠা পানির একটি মাছ। বাংলাদেশ (পদ্মা ও যমুনা এবং তাদের শাখা নদীতে), ভারত (আসাম, উত্তরাঞ্চল, উত্তর প্রদেশ), নেপাল, ইরান, মিয়ানমার, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও আফগানিস্তানে এই মাছের বিস্তৃতি রয়েছে।

মানবদেহে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব পূরণ, রাতকানা প্রতিরোধ, লৌহের ঘাটতি পূরণে এই মাছ অত্যন্ত কার্যকর।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে ইতিমধ্যে পিয়ালি, বাতাসি, ঢ্যালাসহ ২৯ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করতে সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে পাবদা, গুলশা, ট্যাংরা, বাটা, ফলি, মহাশোল, খলিশা, বৈরালী, গুতুম অন্যতম।

পিয়ালি মাছ দ্রুত বর্ধনশীল ও খেতে খুবই সুস্বাদু

দেশীয় বিলুপ্ত প্রজাতির সব ছোট মাছকে পর্যায়ক্রমে ভোক্তাদের পাতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান বিএফআরআইর মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ। পিয়ালি মাছের প্রজনন সফলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, চলতি বছর ১০টি দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢেলা, বাতাসি, লইটি ট্যাংরা, পুইয়া ও পিয়ালি মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে।