Thank you for trying Sticky AMP!!

উজান থেকে আসা ঢলে সুরমার পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা। ছবিটি আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা

পাহাড়ি ঢলের বন্যায় সিলেটে লাখো মানুষ পানিবন্দী

সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরসমান। জমে থাকা পানিতে ভাসছে বারোয়ারি ময়লা-আবর্জনা আর পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল ও ককশিট। কোথাও কোথাও ভাসছে মানুষের মলও। পানি থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা এখন চলাচল করছে।

দুই দিন ধরে এমন অবস্থা চলছে সিলেট নগরের উপশহর, মাছিমপুর, সোবাহানীঘাট, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, তালতলা, তেরোরতন, মেন্দিবাগ, তোপখানা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়িসহ অন্তত ২০টি এলাকায়। সুরমা নদীর পানি উপচে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার একাংশ প্লাবিত হয়েছে। এতে লাখো মানুষ পানিবন্দী জীবন যাপন করছে। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। অনেক জায়গায় চুলা–নলকূপও ডুবেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে থেমে থেমে সিলেটে বৃষ্টি পড়ছে। এর মধ্যেই পানি মাড়িয়ে রাস্তা দিয়ে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশাসহ অন্যান্য যান চলাচল করছে। তবে রাস্তা ও নালা-নর্দমা একাকার হয়ে যাওয়ায় অনেক যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। ফলে তুলনামূলক কম যানবাহন এসব এলাকায় চলাচল করছে। এতে অফিসসহ জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজন পড়েছেন আরও ভোগান্তিতে। যানবাহন সংকটে তাঁরা নোংরা পানি মাড়িয়ে হেঁটে–ভিজেই গন্তব্যে যাচ্ছেন। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেকে ইটের মধ্যে কাঠ ফেলে ঘরের মধ্যে চলাচল করছে। অনেকের রান্নাঘর তলিয়ে যাওয়ায় বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।

সকাল ১০টার দিকে জামতলা এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী মৃদুলা গুপ্তা (৭০) জানান, তাঁর বাসার উঠানে হাঁটুসমান পানি। ঘরের ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে। সকালের পর থেকে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে অনেক জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। জরুরি জিনিসপত্র তিনি খাটসহ উঁচু স্থানে রেখেছেন। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২০০৪ সালের পর এবারই পানি বেশি দেখা গেছে। ২০১৯ সালে নদী উপচে শহরের কিছু এলাকা প্লাবিত হলেও সেবার পানির পরিমাণ ছিল তুলনামূলক কম।

সিলেটের শাহজালাল উপশহর এলাকার প্রধান সড়কে বন্যার পানি। সেই পানির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও মানুষজন। ছবিটি আজ সকালে তোলা

তালতলা এলাকার প্রধান রাস্তা দিয়ে হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে যাচ্ছিলেন আবদুর রব (৪৪) নামের এক পথচারী। তাঁর বাসা শেখঘাট এলাকায়। তিনি জানান, জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বেরিয়েছেন। রিকশা না পেয়ে হেঁটেই চলছেন। চলতে গিয়ে পানির তোড়ে ভেসে আসা ময়লা-আবর্জনা তাঁর পায়ে ঠেকছে। উপশহর এলাকার বি ব্লকের বাসিন্দা ও মুহিবুর রহমান একাডেমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামছ উদ্দিন জানান, তাঁর বাসার সামনে হাঁটুসমান পানি। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনেকের বাসায় পানি ঢোকায় ভোগান্তি বেড়েছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় দৈনন্দিন কাজকর্ম কঠিন হয়ে পড়েছে।

নগরের মাছিমপুর এলাকার রাবেয়া মঞ্জিলের সামনেও কোমরসমান পানি। সেখানে কথা হয় ওই বাসার বাসিন্দা ছালেহ বিন ইকরামের (৩৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, পানি বাড়ছে। মনে হয়, ঘর ছাড়তে হবে। এভাবে দুর্ভোগ নিয়ে থাকা কঠিন। একই এলাকায় কথা হয় মুন্না মিয়া (৪২) নামের এক বাসিন্দার সঙ্গে। বাসায় পানি ঢুকে পড়ায় তিনি তাঁর বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

উপশহর জি ব্লকের বাসিন্দা ও নগরের একটি কনসালটেন্সি ফার্মে চাকরিরত সাব্বির আলম (৩২) বলেন, মূল রাস্তায় পানি ওঠায় তিনি যানবাহনের সংকটে বাসা থেকে বেরোতে পারছিলেন না। পরে একটি ট্রাক দেখতে পেয়ে সেটিতে উঠে অফিসের উদ্দেশে রওনা হন। প্লাবিত এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় প্লাবিত এলাকাগুলোতে কয়েক শ দোকান বন্ধ আছে। দোকানের মালামাল বিনষ্ট হওয়ায় তাঁরা কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন।

বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সুরমা নদীর পানি উপচে সিলেট নগরে প্রবেশ করেছে। সেই পানির মধ্যেই চলছে যানবাহন। ছবিটি আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা

ভুক্তভোগী নগরবাসীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পাড় উপচে সুরমা নদীর পার্শ্ববর্তী নগরের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার পাশ দিয়ে সুরমা নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী ছড়া (প্রাকৃতিক খাল) রয়েছে। নদীতে পানি বেশি থাকায় কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট পানি এসব ছড়া দিয়েও নদীতে মিশতে পারছে না। এ অবস্থায় ছড়া ও নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় পানি আজ কয়েক ইঞ্চি পরিমাণ বেড়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুরমা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নগরের খাল-ছড়াগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছে না। নদীর পানি উপচে তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত না কমলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তবে আমরা পুরো বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখছি। পানিতে ভাসমান ময়লা-আবর্জনা অপসারণসহ প্লাবিত এলাকার অসুবিধাগুলো দূর করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’