Thank you for trying Sticky AMP!!

পাহাড়ের ছড়াগুলো শুকাচ্ছে, কষ্টে চার গ্রামের মানুষ

দূর পথ পাড়ি দিয়ে এভাবেই পাহাড়ি নারীদের পানি সংগ্রহ করতে হয়। দৈইলাতলী , খাগড়াছড়ি, ২০ মার্চ। ছবি: নিরব চৌধুরী

কমলা ত্রিপুরায় দিন শুরু হয় ভোর সাড়ে চারটায়। খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গোলাবাড়ী ইউনিয়নের দৈইলাতলী এলাকার গৃহবধূ কমলা। দুই ননদ ও এক মেয়েকে নিয়ে ভোরবেলায় ছুটতে হয় পানির জন্য। আগে আধা কিলোমিটারের মধ্যে পানি পাওয়া গেলেও এখন যেতে হয় এক কিলোমিটারের বেশি। ভোরে পানি আনতে না গেলে পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পানি নিয়ে আসতে আসতে বেলা বেড়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন সকালে যেতে হয় তিনবার। একইভাবে যেতে হয় বিকেলেও। আশপাশের চার গ্রামের মানুষের পানি সংগ্রহে এই অভিন্ন কষ্ট।

মনিকা জানান, তাঁদের আটজনের সংসারে প্রয়োজন ২৫ থেকে ৩০ কলসি পানি। চারজনে তিনবারে নিয়ে আসেন খাওয়ার ও দৈনন্দিন ব্যবহারের পানি। অনেক সময় পানি কম পড়ে যায়। তখন তিনি আবার গিয়ে পানি নিয়ে আসেন।

ফাগুন মাসের শুরু থেকেই দেখা দিয়েছে পানির সংকট। ওই এলাকার খাওয়ার পানির ভরসা ছড়ার পাড়ের কুয়া। বর্ষায় সময় বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হলেও শুষ্ক মৌসুম এলে বেড়ে যায় পানির ভোগান্তি। এলাকায় কয়েকটি নলকূপ থাকলেও বর্ষা মৌসুম ছাড়া পানি আসে না।

খাগড়াছড়ি সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের গ্রাম দৈইলাতলী। দেখা গেল, ছোট ছড়ায় বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রেখেছে গ্রামের লোকজন। হাঁটুসমান ওই পানিতে গোসল করছেন কয়েকজন শিশু ও গৃহবধূ। খাওয়ার পানির উৎস কুয়াগুলো ছড়ার পাড়ে। কুয়া থেকে পানি উঠছে ধীরগতিতে। তাতে লাইনে দাঁড়িয়ে পানির জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকজন নারী।

স্থানীয় গ্রামবাসী জানায়, দুল্যাতলী, চাকমাপাড়া, কাটতলা ও কলাপাড়া এ চার গ্রামে সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। ছড়ার পাড়ে ছোট ছোট কুয়া থেকে গ্রামের সবার পানি ব্যবহার করতে হয়। কুয়ার পানি বেশির ভাগ সময় ঘোলাটে থাকে। এসব পানি ব্যবহারের ফলে গ্রামের লোকজন প্রায় সময় ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়।

শুকিয়ে যাওয়া ছড়া থেকে পানি সংগ্রহ করছেন এক নারী। দুল্যাতলী, খাগড়াছড়ি, ২০ মার্চ। ছবি: নিরব চৌধুরী

কলাপাড়া গ্রামের কার্বারি অরুণ ত্রিপুরা বলেন, স্থানীয় ব্যক্তিদের পানির জন্য দূরদূরান্তে যেতে হয়। বিশেষ করে ছড়া-ঝিরি যখন শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়, তখন এলাকাবাসী মাইলের পর মাইল হেঁটে পানি সংগ্রহ করে থাকে। এ ব্যাপারে যদি কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করে তাহলে গ্রামের লোকজন উপকৃত হবে।

গোলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞানরঞ্জন ত্রিপুরা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধারণত নলকূপ ও রিংওয়েল দেওয়া হয়ে থাকে। সেগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুটের বেশি নয়। ওই এলাকায় নলকূপ ও রিংওয়েল বসানোর জন্য বারবার চেষ্টা করা হলেও পাথুরে হওয়ার কারণে পানির স্তর না থাকায় পানি পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে অতিরিক্ত বাজেট না থাকায় গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব নয়।

এদিকে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকা বেশির ভাগ পাথুরে হওয়ার কারণে নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। তবে কোনো গ্রাম কিংবা এলাকা থেকে প্রকৌশল বিভাগের কাছে যদি আবেদন করা হয়, তাহলে ওই এলাকায় গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, ভেবে দেখা হবে।