Thank you for trying Sticky AMP!!

আসছে আবার পদপিষ্ট হয়েই...

দিনের বেলায় কারখানার ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভেতরের পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে। এমন পরিবেশে রমজানের শুরু থেকে লাচ্ছা সেমাই তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকেরা। মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। শনিবার বিকেলে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ার একটি কারখানায়। ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়ার সেমাই কারখানাগুলোর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অস্বাস্থ্যকর সেমাই তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিবছরই ঈদের আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। জেলা প্রশাসনের অভিযানও চলে, জরিমানাও হয়। তবু অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। বছরের পর বছর একইভাবে চলছে এই কারখানাগুলো। এবারে করোনা মহামারির মধ্যেও সেখানে মেঝেতে ময়দা ফেলে পায়ে মাড়িয়ে খামির তৈরি চলছে। কর্মীদের নেই কোনো বিশেষ পোশাক, টুপি ও গ্লাভস।

ঈদ সামনে রেখে বগুড়ার সেমাই কারখানাগুলোতে সেমাই তৈরির তোড়জোড় শুরু হয় কয়েক মাস আগে থেকেই। এখানে তৈরি চিকন সেমাই ও লাচ্ছা সেমাই গোটা উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

সেমাই কারখানাগুলোর বেশির ভাগই কাহালু উপজেলায়। এখানকার শেখাহার বাজার এলাকায় অর্ধশতাধিক সেমাইয়ের কারখানা। এলাকাটি পরিচিতি পেয়েছে লাচ্ছাপল্লি হিসেবে।

শনিবার শেখাহার লাচ্ছাপল্লি ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের মধ্যেও কারখানাগুলোতে উৎপাদন চলছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, পুরো মৌসুমে এখানে হাজার টনের বেশি সেমাই তৈরি হয়। যার বাজার প্রায় শত কোটি টাকা। দেশের নামীদামি অনেক কোম্পানি এখান থেকে লাচ্ছা কিনে নিজস্ব প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করে। এখানকার বেশির ভাগ কারখানার বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই। মহামারির কারণে এবার ব্যবসা মন্দা বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

শেখাহারের সবচেয়ে বড় ভাই ভাই লাচ্ছা সেমাই কারখানা। কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, খামির তৈরি থেকে উৎপাদন ও প্যাকেজিং পর্যন্ত বহু কারিগর ও শ্রমিক কাজ করছেন। শ্রমিকদের কারও কারও মুখে মাস্ক থাকলে ও হাতে দস্তানা (গ্লাভস) নেই। কারিগরদের গা থেকে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম পড়ছে। খামিরে ভোঁ ভোঁ করছে মাছি।

জানতে চাইলে কারখানার মালিক ও শেখাহার লাচ্ছা সেমাই মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ স্বাস্থ্যবিধি না মানা, পণ্যের গুণগত মান এসব নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এর আগে তিনি বলেন, এবার ব্যবসা মন্দা। বাইরের জেলায় লাচ্ছা পাঠানো যাচ্ছে না।

ওই এলাকার বেশির ভাগ কারখানার অবস্থা এ রকম। কাহালুর ইউএনও মাসুদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লাচ্ছা তৈরির দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ভাই ভাই লাচ্ছা কারখানার মালিককে কয়েক দিন আগেই এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া মেঝেতে ময়দা ফেলে পায়ে মাড়িয়ে খামির করে লাচ্ছা তৈরির দায়ে গত বৃহস্পতিবার মালঞ্চা এলাকায় আমানত ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ইউএনও বলেন, ‌‘ভাই ভয়ংকর অবস্থা। আমানত বেকারিতে গিয়ে দেখা গেল পাকা মেঝের ওপর ময়দা ঢেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে খামির করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। এমনকি মেঝের ওপর একটা পলিথিনও বিছানো হয়নি।’ ‌স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সেমাই তৈরির একই চিত্র বগুড়া শহরের উপকণ্ঠে বেজোড়া, ঘাটপাড়া, শেওলাগাতি, কালিসামাটি, শ্যামবাড়িয়াসহ আশপাশের ‘চিকন সেমাইপল্লি’তেও।

বগুড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ টি এম কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চলতি রমজান মাসে এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ২০টি লাচ্ছা কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন তিনি। পাঁচ-ছয়টি কারখানায় পায়ে মাড়িয়ে ময়দা খামির করতে দেখেছেন।