Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রসূতি নারীদের ঘরে ওষুধ নিয়ে হাজির স্বাস্থ্যকর্মীরা

মৌসুমি বেগম ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই মাস ধরে সরকারি প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যঝুঁকির দুশ্চিন্তা নিয়ে দিন পার করছিলেন তিনি। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক স্বাস্থ্যকর্মী তাঁর বাড়িতে হাজির। স্বাস্থ্যকর্মী তাঁর হাতে তুলে দিলেন তিন মাসের জন্য প্রয়োজনীয় আয়রন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ওমিপ্রাজল ও প্যারাসিটামল ট্যাবলেট। ঘরে বসে প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবার ওষুধ পেয়ে দারুণ খুশি মৌসুমি বেগম।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মৌসুমি। ঘরে ওষুধ পেয়ে তিনি বললেন, পেটে বাচ্চা এলে এমনিতেই মৃত্যুভয় কাজ করে, তার ওপর করোনা। এই অবস্থায় ভয়টা আরও বেশি। তা ছাড়া ওষুধ–পথ্য ঠিকমতো খেতে পারছিলেন না। সব মিলিয়ে ভয়টা মনের মধ্যে শক্ত করে ভর করছিল। এখন ওষুধ পেলেন। সাহস বেড়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমির মতো ভৈরবের ১ হাজার ৭৭১ জন প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবাপ্রত্যাশী ঘরে বসে তিন মাসের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পেয়েছেন। নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা দিনব্যাপী প্রত্যাশিত নারীদের ঘরে ঘরে এই স্বাস্থ্য উপকরণ পৌঁছে দেন। এতে করে করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকিতে পড়া প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে গতি ফিরে এল।

স্বাস্থ্য বিভাগের ধারণা, কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা অনেকটা কমে আসবে। গজারিয়া ইউনিয়নে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমি ২১ জনের বাড়িতে গেছি। ওষুধ হাতে পাওয়ার পর আমি প্রত্যেক নারীর মুখে স্বস্তির ছাপ দেখেছি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, সর্বশেষ হিসাবমতে ভৈরবে প্রসূতি নারী রয়েছেন ১ হাজার ৭৭১ জন। শুরুর দিক থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হতে থাকেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৭ জন চিকিৎসকসহ ২২ জন স্বাস্থ্যকর্মী শনাক্ত হয়েছেন। এতে করে দীর্ঘদিন হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। একই কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমেও। দুই সপ্তাহ আগে থেকে হাসপাতালের কার্যক্রমে আবার স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করে।

সূত্র জানায়, প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবায়ও গতি এসেছে। নিয়ম হলো প্রসূতি নারীদের ৯ মাস স্বাস্থ্যসেবার আওতায় থাকতে হয়। এই সময়ে নিয়মিতভাবে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ট্যাবলেট সেবন করতে হয়। করোনার জন্য ওষুধ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন মাসের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয়। সকাল থেকে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ডভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মীরা ওষুধ নিয়ে বাড়িতে গিয়ে হাজির হন।

এ উপলক্ষে সকালে উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবরনগর কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ইউএনও লুবনা ফারজানা ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কয়েকজন প্রসূতি নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসটি যদি সার্থক করতে হয়, তাহলে এই মুহূর্তে প্রসূতি নারীর বাড়িতে গিয়ে ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে। আমরা তাই করেছি, আশা করছি এর সুফল পাব।’