Thank you for trying Sticky AMP!!

দুর্বৃত্তদের কেটে দেওয়া লাউখেতের টালে হাত রেখে বিমর্ষ আতিয়ার রহমান। এই কৃষকের প্রশ্ন, ‘ফসলের সঙ্গে এভাবে কেউ শত্রুতা করতে পারে’। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামে

‘ফসলের সঙ্গে এভাবে কেউ শত্রুতা করতে পারে’

নিড়ানি দেওয়া পরিষ্কার-চকচকে জমি, চারদিকে সবুজ আর সবুজ। তারকাঁটা আর বাঁশ দিয়ে ঘেরা গোটা এলাকা। তার মধ্যে ৫০ শতক জমিতে রয়েছে ডায়না জাতের হাইব্রিড লাউখেত। সুন্দর টাল (মাচা) দিয়ে রাখা হয়েছে। টালে ছড়িয়ে আছে গাছগুলোর সবুজ পাতা। দেখলেই যে কারও প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছিল খেতে। কিন্তু আজ মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, টালে ছড়িয়ে থাকা সেই পাতাগুলো সব নুয়ে পড়েছে। কে বা কারা রাতের আঁধারে এই খেতের প্রায় ২৫০টি লাউগাছ গোড়া থেকে দিয়েছে কেটে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের নাম আতিয়ার রহমান। তিনি একা নন, খেতের এই অবস্থা যিনিই দেখতে যাচ্ছেন, তিনিই হতবাক হয়ে পড়ছেন। কৃষকের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই তাঁদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। এই লাউখেত কেটে দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামের মাঠে।

কৃষক আতিয়ার বলেন, প্রতিবছর তিনি ৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে নানা ফসলের চাষ করেন। যার মধ্যে বেশির ভাগই থাকে সবজি। এ বছর এক বিঘা জমিতে বেগুন, দুই বিঘা জমিতে মুলা, কিছু অংশে ওল, হলুদ আর ৫০ শতকে লাউ চাষ করেছিলেন। গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে এই লাউখেতে বীজ বপন করেন। হাইব্রিড জাতের লাউ হওয়ায় অল্প দিনের মধ্যে গাছগুলো বড় হয়ে যায়। প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে সেখানে টাল দেন তিনি। গাছগুলো টালে যাওয়ার পর ফুল আসতে শুরু করে। কিছু কিছু গাছে লাউও ধরেছিল। এ পর্যন্ত তাঁর এই খেতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা, যার বেশির ভাগ তিনি ধারদেনা করে জোগাড় করেছেন।

Also Read: কলাবাগান হারিয়েছেন, ঋণ শোধ দেবেন কি করে

আতিয়ার রহমান বলেন, গত দেড় মাস তিনি একটানা এই খেতে পড়ে থেকেছেন। সবকিছু নিজেই তদারকি করতেন। প্রতিটি গাছেই তাঁর হাতের ছোঁয়া রয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল সোমবার রাত ১১টা পর্যন্ত তিনি এই খেতে ছিলেন। এরপর বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। আজ বেলা ১১টার দিকে তিনি খেতের মধ্যে গিয়ে দেখেন, সব কটি গাছের পাতা টালের ওপর নুয়ে পড়েছে। কারণ খুঁজতে গিয়ে গাছের গোড়ায় হাত দিয়ে দেখেন, গাছগুলোর গোড়া থেকে কাটা। একে একে সব গাছই কাটা দেখতে পান। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কৃষক আতিয়ার রহমান তাঁর কেটে দেওয়া লাউ গাছের গোড়া দেখাচ্ছেন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামে

পরে খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ভিড় করলে আতিয়ার করে বলেন, আশা করেছিলেন এই খেত থেকে আড়াই লাখ টাকার লাউ বিক্রি করবেন। কিন্তু তাঁর সব শেষ হয়ে গেছে। এখন রাজ্যের চিন্তা তাঁর কীভাবে দেনা পরিশোধ করবেন, সে নিয়ে।

এখনো ঘটনা বিশ্বাস করতে পারছেন না জানিয়ে আতিয়ার বলেন, এভাবে ফসলের ক্ষতি করবে তাঁর এমন কোনো শত্রু নেই। তারপরও যারা এটা করেছে, তারা তাঁকে আর্থিকভাবেই শেষ করে দিতে চায় বুঝছেন। তিনি বলেন, ‘ফসলের সঙ্গে এভাবে কেউ শত্রুতা করতে পারে! এ না দেখলে বিশ্বাস হবে না।’ তিনি এই বিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান। তিনি এর বিচার দাবি করেন।

গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, এই ক্ষতি কোনোভাবেই মানা যায় না। গাছগুলো কৃষকের কাছে তাঁর সন্তানের মতো। সেভাবেই তিনি বড় করেছেন। যারা এই ফসলের ক্ষতি করেছে, প্রশাসন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে—এটাই সবার প্রত্যাশা।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিকদার মো. মোহাইমেন আক্তার বলেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত খেতটি পরিদর্শন করেছেন। কৃষক যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে বিষয়ে তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রানী সাহা বলেন, ওই কৃষক লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Also Read: বাসন্তীর কলাবাগান কেটে কী পেল বনবিভাগ