Thank you for trying Sticky AMP!!

ফেরি ও ঘাট স্বল্পতার কারণে আটকা পড়া পণ্যবাহী গাড়ির লম্বা লাইন। আজ শনিবার সকালে দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট এলাকায়

ফেরি ও ঘাটস্বল্পতায় দৌলতদিয়ায় ঢাকাগামী গাড়ির লম্বা লাইন

দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি ও ঘাটস্বল্পতার কারণে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। যথাসময়ে নদী পাড়ি দিতে না পারায় বেশ কিছুদিন ধরে দৌলতদিয়ায় যানবাহন আটকে লম্বা লাইন তৈরি হচ্ছে। আজ শনিবার দুপুরেও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঢাকাগামী কয়েক শ গাড়ির লম্বা লাইন দেখা যায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, যানবাহন ও যাত্রী সাধারণ নির্বিঘ্নে পারাপার করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ১৮টি ফেরি চালু ছিল। এর মধ্যে ১০টি রো রো (বড়), ৭টি ইউটিলিটি (ছোট), একটি মাঝারি ফেরি রয়েছে। অনেক পুরোনো হওয়ায় মাঝেমধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ফেরিস্বল্পতা দেখা দেয়। বিশেষ করে ফেরির প্রোপালশন (সামনে এগোনোর ব্যবস্থা) সমস্যার কারণে ট্রিপ দিতে না পারায় বসে পড়ে। এ ছাড়া দৌলতদিয়ায় ৬টির মধ্যে বর্তমানে ৩টি ঘাট চালু রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, দুই সপ্তাহ আগে ‘কেরামত আলী’ ও ‘ভাষাশহীদ বরকত’ নামক দুটি বড় ফেরির প্রোপালশনসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ক্ষয় হয়ে বিকল হয়ে পড়ে। কেরামত আলী ফেরিকে পাটুরিয়ার মধুমতি কারখানায় রেখে মেরামত শেষে নৌপথে সংযুক্ত করা হয়। ভাষাশহীদ বরকত ফেরিকে উন্নত মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়। প্রোপালশনের পাখা ভেঙে যাওয়ায় গত সপ্তাহে বড় ফেরি ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান’কে মধুমতিতে রাখা হয়। সেটিও মেরামত শেষে নামানো হয়েছে। গত বুধবার সকালে মাঝারি ফেরি ‘ঢাকা’ যান্ত্রিক ত্রুটিতে সাময়িকভাবে বসে পড়ে।

দুই বছর আগে বন্যায় ভাঙনে ১ ও ২ নম্বর ঘাট বিলীন হয়ে যায়। বাকি ৪টির মধ্যে পানি কমে যাওয়ায় ৩ নম্বর মিডওয়াটার ঘাট প্রায় এক মাস আগে বন্ধ হয়ে যায়।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত সপ্তাহে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চালু করায় এই রুট থেকে ‘কপতী’ ও ‘কেতকী’ নামের দুটি ইউটিলিটি ফেরি সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে কপতীকে ফিরিয়ে আনলেও রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে নিয়ে যায়। ফলে ফেরিসংকট আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে নৌপথে ৮টি বড়, ৬টি ছোট ও মাঝারি ‘ঢাকা’ ফেরি দিয়ে গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে।

ফেরিস্বল্পতা ছাড়াও দৌলতদিয়ায় ৬টির মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৩টি ঘাট চালু রয়েছে। দুই বছর আগে বন্যায় ভাঙনে ১ ও ২ নম্বর ঘাট বিলীন হয়ে যায়। বাকি ৪টির মধ্যে পানি কমে যাওয়ায় ৩ নম্বর মিডওয়াটার ঘাট প্রায় এক মাস আগে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ৩ নম্বর ঘাটের ডাউন (নিচু) এবং ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে।

আজ সকালে দৌলতদিয়ায় দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঢাকাগামী কয়েক শ পণ্যবাহী গাড়ির লম্বা লাইন। লাইনে থাকা অধিকাংশ গাড়ি একদিন আগে ঘাট থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূর গোয়ালন্দ মোড় আটকে ছিল। ঘাটে গাড়ির চাপ কমাতে ট্রাফিক পুলিশ এসব গাড়িকে গোয়ালন্দ মোড় আহ্লাদীপুর এলাকায় আটকে দেয়।

ফেরি ও ঘাট স্বল্পতার কারণে দৌলতদিয়া প্রান্তে ঢাকাগামী গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হচ্ছে। লাইন ভঙ্গ করে আগে যাওয়ার চেষ্টাকালে পুলিশ একটি গাড়ি আটকে দেয়। আজ শনিবার সকালে দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট এলাকায়

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে আসা চালবোঝাই ট্রাকচালক জুয়েল রানা বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে দুপুরে গোয়ালন্দ মোড় পৌঁছাই। সেখানে ট্রাফিক পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। শনিবার ভোরে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে দেয়। ১৯-২০ ঘণ্টা করে মহাসড়কে আটকে থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

বেনাপোল থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে পোশাক তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে শুক্রবার রওনা করে দুপুরে গোয়ালন্দ মোড় আটকা পড়েন কাভার্ড ভ্যানের চালক জসিম শেখ। তিনি বলেন, ‘শনিবার সকালে মাওনা পৌঁছানোর কথা থাকলেও দৌলতদিয়ায় আটকে আছি। এ ছাড়া হেলপার ৬ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছি। তারপর এভাবে আটকে থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ বলেন, আরিচা-কাজিরহাট রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করায় দুটি ফেরি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি বড় ফেরি ডকইয়ার্ডে রয়েছে। এসব কারণে কিছুটা ফেরিসংকট দেখা দিয়েছে। সব কটি ফেরি চালু থাকলে ঘাটে কোনো প্রকার চাপ থাকবে না।