বগুড়ায় বিক্ষোভকারীদের ভাগ্যে এখনো জোটেনি ত্রাণ
বগুড়ায় ত্রাণের দাবিতে মহাসড়কের পাশে প্লাকার্ড হাতে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারী শ্রমজীবিরা এখনো কোনো সহায়তা পাননি। প্রশাসনের আশ্বাসে ত্রাণের অপেক্ষায় রয়েছেন ওই শ্রমজীবি মানুষেরা। তবে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ গতকাল শনিবার রাতে প্রথম আলোকে জানান, বিক্ষোভকারীদের তালিকা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব মানুষের জন্য আলাদাভাবে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হবে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া বগুড়া শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারপুর মধ্যপাড়ায় বসবাসকারী শতাধিক খেটে খাওয়া শ্রমজীবী হতদরিদ্র মানুষ গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ করেন। বগুড়া শহরতলীর মাটিডালি মোড় সংলগ্ন মোজামনগর এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ করেন। প্লাকার্ড হাতে নারী-পুরুষ মানববন্ধন করেন।
খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়। পরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান সেখানে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের ত্রাণ দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমজীবীরা ঘরে ফিরে যান।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগ কারখানা শ্রমিক, রিকশাচালক, দিন মজুর, হোটেল শ্রমিক, ওয়ার্কশপের শ্রমিকসহ নানা নিম্ন আয়ের পেশার মানুষ ছিলেন। তাঁদের প্লাকার্ডে লেখা ছিল 'খাবার চাই, ত্রাণ চাই', 'আমরা খেটে খাওয়া শ্রমিক, আমরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছি' ইত্যাদি।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া একজন রিকশাচালক আজ রোববার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সকাল দশটা পযর্ন্ত তাঁরা কোনো ত্রাণ পাননি। নাম প্রকাশ করলে হয়রানির স্বীকার হতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ওই ব্যক্তি বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ছুটি এবং ঘরে থাকার নির্দেশনা জারির পর থেকেই তাঁর মতো ওই এলাকার অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। হাতে কাজ নেই। মজুরি নেই। রাস্তায় রিকশা বের করা যায় না। রোজগার নেই। ঘরে খাবার নেই। কয়েকশ পরিবার খুব কষ্টে রয়েছেন। অথচ এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়নি। কোনো কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধি খোঁজ নেননি। বাধ্য হয়ে ত্রানের দাবিতে তাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন।
ত্রাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে বগুড়া পৌরসভার ১৭নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেজবাহুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে সাড়ে প্রায় ১৫ হাজার ভোটারের মধ্যে কমপক্ষে তিন হাজার শ্রমজীবি, খেটে খাওয়া পরিবার রয়েছে। এখন পর্যন্ত এসব পরিবারের ভাগ্যে সরকারিভাবে এক ছটাকও চাল জোটেনি। পৌরসভার মাধ্যমে জেলা প্রশাসন এই ওয়ার্ডের মাত্র ২১টি পরিবারে বিতরণের জন্য মাথাপিছু ১০ কেজি করে চাল এবং ৬ কেজি করে আলু বরাদ্দ দিয়েছে।
তিনি বলেন, 'তিন হাজার কর্মহীন পরিবারের মধ্যে ২১টি পরিবার বেছে নেওয়া অসম্ভব হওয়ায় ওই বরাদ্দ নিতে যাইনি। এর বাইরে জেলা প্রশাসন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সহ ৫০০ দুস্থ পরিবারের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্ত সহায়তা এখনও পাওয়া যায়নি।'
জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের চাচা মেজবাহুল হামিদ আরও বলেন, 'সরকারি ত্রাণ না পেয়ে বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেড় হাজার পরিবারে চাল, ডালসহ খাদ্য দ্রব্য বিতরণ করেছি। এখনো অনেক পরিবার ত্রাণ পাননি। বঞ্চিত ব্যক্তিরা ত্রাণের দাবিতে প্লাকার্ড হাতে গতকাল মানববন্ধন করেছেন। তাঁদের জন্য ত্রাণ বরাদ্দের আশ্বাস দেওয়া হলেও কোনো ত্রাণ আসেনি।
বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি ফাঁড়ির পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের পাশে রাস্তার মুখে কিছু লোক ত্রাণের দাবিতে জড়ো হয়েছিলেন। পরে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, 'পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ খানিক মানুষ ত্রাণের দাবিতে মোজামনগর এলাকায় মহাসড়কের পাশে প্লাকার্ড হাতে দাঁড়ান। ডিসি স্যারের নির্দেশে সেখানে গিয়ে তাঁদেরকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য আশ্বস্ত করার পর তাঁরা ঘরে ফিরে যান।'