Thank you for trying Sticky AMP!!

বদরগঞ্জে মায়ের বিরুদ্ধে মেয়েকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের হাজীপুর গয়দাপাড়া গ্রামের সেই মাদ্রাসাছাত্রী মাহবুবা খাতুন ওরফে মেরীকে (২৫) তাঁর মা নুরনাহার বেগম (৪৭) গলা কেটে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা ওই মেয়েটির চিকিৎসা করেও সুস্থ না হওয়ায় এবং মেয়েটিকে বিয়ে দিতে না পারায় তিনি মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আজ শনিবার দুপুরে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় নুরনাহার বেগম স্বেচ্ছায় ওই জবানবন্দি দিয়েছেন বলে আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

বদরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরিফ আলী বলেন, নুরনাহার বেগম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মাহবুবা বদরগঞ্জ ওয়ারেছিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ফাজিলে পড়াশোনা করতেন। দীর্ঘদিন ধরে মেয়েটি প্রচণ্ড মাথাব্যথাসহ মৃগীরোগে ভুগছিলেন। অনেক চিকিৎসার পরও সুস্থ না হওয়ায় এবং মেয়েটিকে বিয়ে দিতে না পারায় তিনি বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে শয়নঘরে জোহরের নামাজরত অবস্থায় মৃগী রোগ উঠলে মাহবুবা চিৎকার দিয়ে জায়নামাজেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সুযোগে নুরনাহার বেগম ঘরে ঢুকে পাশে টেবিলের ওপরে থাকা ছুরি হাতে নিয়ে মাহবুবাকে গলা কেটে হত্যা করেন। পরে প্রতিবেশীদের কাছে প্রচার চালান অসুস্থ মাহবুবা নিজেরই গলা কেটে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনার সময় মা-মেয়ে ছাড়া বাড়িতে আর কেউ ছিল না বলে তিনি আদালতকে জানিয়েছেন।

পুলিশ পরিদর্শক আরও জানান, গতকাল দুপুরের দিকে গলা কেটে মেয়েটিকে হত্যা করা হলেও আত্মহত্যা হিসেবে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়। পুলিশ খবর পায় ওই দিন সন্ধ্যায়। রাতেই সেখানে ছুটে যান থানা, গোয়েন্দা ও পিবিআই পুলিশের বিশেষজ্ঞ দল। রাত সাড়ে আটটার দিকে সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। পুরো ঘটনাটি সন্দেহ হওয়ায় গভীর রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় নুরনাহার বেগমকে। আজ আদালতে তিনি নিজের মেয়েকে হত্যার কারণসহ পুরো ঘটনা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এর আগে আজ সকালে হত্যাকাণ্ডের শিকার মেয়েটির চাচা সেরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় নুরনাহারকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। খুনের ঘটনায় নুরনাহারের সহযোগী হিসেবে অন্য কেউ থাকতে পারেন বলে মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন।

থানা–পুলিশ জানায়, মাহবুবাকে তাঁর মা নুরনাহার একাই গলা কেটে হত্যা করেছেন এবং ঘটনার সময় বাড়িতে অন্য কেউ ছিল না বলে নুরনাহার দাবি করলেও পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মাহবুবার বাবা মেনহাজুল স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। তিনি এলাকার একটি মাদ্রাসার সুপারের দায়িত্বে রয়েছেন। মেয়েটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য আজ সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মেয়েটির বাবা মেনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটি অসুস্থ ছিল। টাকা খরচ করে অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কখনো আমি বিরক্তবোধ করিনি। মেয়েটি আমার অনেক ধর্মপরায়ণ ছিল। মা নিজে মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করবে, তা ভাবতেই এখন কষ্ট হচ্ছে। এ জন্য আমি তাঁর (স্ত্রীর) কঠিন শাস্তির দাবি করছি।’