Thank you for trying Sticky AMP!!

বদলে গেল সিলেটে নগরীর কেন্দ্রস্থল

  • গত শুক্রবারই রিকশা বন্ধের নির্দেশ ছিল। কিন্তু নির্দেশ না মানায় সিলেট সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগ গতকাল অভিযান চালায়।

সিলেট নগরীর কেন্দ্রস্থলের সড়কে রিকশা প্রবেশ করতে দেননি সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। চৌহাট্টার মোড়ে রোববার দুপুরে

সিলেট নগরীর কেন্দ্রস্থল যানজটমুক্ত রাখতে চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার-বন্দরবাজর সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশ। একই সঙ্গে ওই সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। গতকাল রোববার সারা দিন এই অভিযান চলে। এর ফলে সকাল থেকে ওই এলাকায় যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরে আসে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সম্প্রতি চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার সড়কে রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় সিটি করপোরেশন। নতুন বছরের প্রথম দিন শুক্রবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের নির্দেশনা ছিল। নির্দেশনা মানতে সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছিল। তবে গত শুক্রবার সকাল থেকে চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার সড়কে অন্যান্য দিনের মতোই রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ট্রাফিক পুলিশকে নিয়ে মাঠে নামবে বলে জানিয়েছিল।

গতকাল সকালে সিটি করপোরেশনের একদল কর্মী ওই এলাকার তিনটি মোড়ে রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) উপকমিশনার ফয়সল মাহমুদের নেতৃত্বে দুটি দল রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশনা নিয়ে মাঠে তৎপরতা চালায়। এ সময় ব্যস্ত এলাকা পুরোটা রিকশাবিহীন হয়ে পড়লে অন্যান্য যান চলাচলে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করে।

সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলের সড়কে রিকশা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। রোববার দুপুরে চৌহাট্টার মোড়ে
চৌহাট্টা-বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র। এ এলাকা থেকে ইতিমধ্যে ফুটপাত দখল করে থাকা হকারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। মুক্ত ফুটপাত হওয়ায় এখন সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
আরিফুল হক চৌধুরী, মেয়র, সিলেট

সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের তদারকিতে চৌহাট্টা, কোর্ট পয়েন্ট ও বন্দরবাজার থেকে রিকশা চলাচল বন্ধ করার পর সন্ধ্যার আগপর্যন্ত পুরো এলাকায় অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধেও অভিযান চলে। সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ পার্কিং করায় সাতটি মামলা করে।

চৌহাট্টা মোড়ে অবস্থানকালে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চৌহাট্টা-বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র। এ এলাকা থেকে ইতিমধ্যে ফুটপাত দখল করে থাকা হকারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। মুক্ত ফুটপাত হওয়ায় এখন সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রস্থলের এলাকাকে একটি আদর্শ স্থানে রূপ দিতেই এই চেষ্টা চালানো হয়। ট্রাফিক পুলিশকে নিয়ে এই তদারকি অব্যাহত রাখা হবে।

এ সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে গাড়ির অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে মেয়র আরও বলেন, ‘এ রাস্তায় শুধু রিকশা বন্ধ করলে হবে না। রিকশা বন্ধ করে যদি দেখা যায়, সবাই অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে রেখে দিয়েছেন, তাহলে আমাদের কষ্ট আর চেষ্টা সফল হবে না। তাই একটি যানজটমুক্ত স্বস্তিদায়ক নগরী গড়তে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। সবাই নিজ নিজ গাড়ি মার্কেটের নির্দিষ্ট পার্কিংয়ে রেখে সহযোগিতা করবেন বলে আশা করছি।’

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা মোড় পর্যন্ত সড়কটিতে একমুখী (ওয়ানওয়ে) যান চলাচল থাকলেও সম্প্রতি সড়ক বিভাজক স্থাপন করে দ্বিমুখী যান চলাচলের ব্যবস্থা করে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সড়ক বিভাজকের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। এ সড়ক এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসহ সরকারি–বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে। এ ছাড়া নগরের প্রধান প্রধান বিপণিবিতানও জিন্দাবাজারসহ এ এলাকার আশপাশে অবস্থিত। পুরো এলাকার বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ করে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

এসব উন্নয়ন কার্যক্রম শেষে পুরো এলাকাকে নগরীর একটি আদর্শ এলাকায় রূপান্তর করার পরিকল্পনায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার এলাকায় রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়টি গত ১৫ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীতে মাইকিং করে প্রচার করা হয়।

তবে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। রিকশা চলাচল বন্ধ শ্রমিক স্বার্থবিরোধী দাবি করে দুটি সংগঠন বলেছে, সিটি করপোরেশন আলাপ-আলোচনা ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে।