Thank you for trying Sticky AMP!!

বন্দিজীবন থেকে মুক্তির প্রত্যাশায়

করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: dp@prothomalo.com

আমার মনে হয় আমি এর আগে কখনো এত দিন একটানা বাসায় থাকিনি। সেই ১৮ মার্চ থেকে একটানা চার মাসের ও বেশি সময় ধরে বাসায় বন্দী। আমি বরাবরই দুরন্ত প্রকৃতির, বাসায় থাকতে ভালোই লাগে না। অবশ্য অন্য সময় বেশি একটা বাসায় থাকতেও হতো না। প্রাইভেট, স্কুলের কারণে দিনের অনেকখানি সময়ই বাইরে বাইরে কাটত। তা ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই মাঠে খেলতে যেতাম। কিন্তু এখন তো ছাদে যেতে গেলেই নিষেধাজ্ঞা। প্রথম প্রথম করোনাভাইরাসকে বেশি একটা পাত্তা দিইনি। মনে করেছি, এ আর এমন কী! এমনিই সেরে যাবে। কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম পরিস্থিতি কতটা খারাপের দিকে যাচ্ছে।

১৭ মার্চ ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। সেদিন আমাদের স্কুলে রচনা প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল। আমি আবার এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে খুবই আগ্রহী, হই বা না হই। তো আগের দিন প্রতিযোগিতার জন্য খুবই ভালো করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। তখন আব্বু-আম্মু বলল, কাল থেকে স্কুল বন্ধ। কাজেই প্রস্তুতি নিয়ে লাভ নেই। কিন্তু আমি তবু প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি হয়ে যায়, সেই আশায়। সকালে শুনলাম স্কুল নাকি আসলেই বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তবু স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আব্বু-আম্মু যেতে দেবে না। আমি নাছোড়বান্দা। আমাকে যেতে দিতে হবেই। অনেক জোরাজুরি কর অবশেষে বাসা থেকে বের হলাম। কিন্তু বেশি দূর যেতে হলো না। পথেই আমার স্কুলের সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হলো। সে জানাল সেও নাকি স্কুলে গিয়েছিল, কিন্তু গিয়ে দেখে স্কুল বন্ধ। কী আর করা! মন খারাপ করে বাসায় চলে এলাম।

বাসায় আসার পরেই তো আম্মু উপদেশ দিতে লাগলেন; মায়ের কথা শুনতে হয়, না শোনার কারণে কী ফল হলো ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই থেকে আমি বলতে গেলে বাসায় বন্দী। শুধু বাইরে বলতে একটু ছাদে যাওয়া যায়, তা–ও খুব জোরাজুরি করে। আর প্রতি শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়া যায়। এর বেশি নয়। এর মাঝে একদিন শুনলাম ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ নামে নাকি টিভিতে ক্লাস হবে। আমদের বাসায় টিভি আছে কিন্তু ডিশ নেই। আমি অতিরিক্ত টিভি দেখে ফেলি বলে আম্মু অনেক আগেই টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। আর কী করা মোবাইলেই ক্লাস করতে লাগলাম। কিন্তু ইন্টারনেটে অনেক ডিস্টার্ব করে বলে ক্লাস করা ছেড়ে দিলাম। নিজে নিজেই পড়তে লাগলাম। যেহেতু আমার বাবা-মা দুজনই শিক্ষক, তাই আমার তেমন একটা সমস্যা হয়নি। এর মাঝে পয়লা বৈশাখ গেল। ঈদও কাটল। কিন্তু করোনা নামক এই মহামারি কাটল না। ঈদে শুধু মসজিদ ছাড়া আর কোথাও যেতে পারিনি। এখন সামনে কোরবানির ঈদ আসছে। এই ঈদ ঠিকমতো কাটাতে পারব কি? জানি না।

তবু এই করোনা মহামারি আমার জীবনে বেশ কিছু সুফল এনে দিয়েছে। আগে আমার আব্বু-আম্মু সারা দিন ব্যস্ত থাকত। আমিও দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে বাইরে থাকতাম। রাতে আব্বু-আম্মুর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকলেও সারা দিন ব্যস্ত থাকার কারণে তারা ওই সময় বিশ্রাম নিত, ফলে সারা দিনে তাদের সঙ্গে বেশি একটা কথা হতো না। কিন্তু করোনার এই সময়ে যেহেতু আমরা সবাই বাসায় সেহেতু আমরা সবাই আরও কাছাকাছি এবং সবই আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিবারকে সময় দিতে পারি।

আমার ইংরেজি লেখা খুবই খারাপ ও ধীরগতির। আমার অনেক দিন ধরেই ইচ্ছা ছিল Cursive Handwritting শিখব। কিন্তু সময়ের অভাবে, অলসতার কারণে সেটি আর করা হয়নি। কিন্তু এখন সেটি সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া আমি গণিত খুব ভালোবাসি। গণিতের মজার মজার সমস্যা সমাধান করতে ভালো লাগে। সেটিতে এক অদ্ভুত রকমের আনন্দ আছে। আগে লেখাপড়ার চাপে সেটি বেশি একটা করতে পারতাম না। কিন্তু এই করোনাকালে আমি মোটামুটি ৫০টির মতো সমস্যার সমাধান করেছি। তা ছাড়া আমি বই পড়তে ভালোবাসি। করোনার এই সময়ে বেশ কয়েকটি বই পড়েছি। তবু কেন যেন বাইরে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে স্কুলে যেতে। যেতে পারব কি? কবে পারব?


*লেখক: শিক্ষার্থী, হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর। নাজির পাড়া, চাঁদপুর।