Thank you for trying Sticky AMP!!

বন্যায় ভাসছে গোয়ালন্দের বেতকা-রাখালগাছি

বন্যায় ভাসছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের বেতকা গুচ্ছগ্রাম। শুক্রবার দুপুরে। ছবি: এম রাশেদুল হক

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত দেবগ্রাম ইউনিয়নের বেতকা ও রাখালগাছি মৌজা। উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন এ দুই এলাকা এখন পানিতে পদ্মার সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।

গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড থেকে যানবাহনে প্রথমে দৌলতদিয়া ঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌযানে দেড় ঘণ্টায় বেতকা। ইঞ্জিনচালিত নৌকার ভটভট শব্দ পেলে সবাই ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে একটু ত্রাণের আশায়। সবার বাড়িতেই পানি। অনেকে পরিবারের গরু-ছাগল পাশের গুচ্ছগ্রামে তুলেছেন।

আজ শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো উপহারের ১০০ প্যাকেট খাবার নিয়ে সেখানে যান। কিন্তু মানুষের ভিড় দেখে বোঝা যায় এ খাবার খুবই অপ্রতুল। প্রথমে বেতকা এলাকায় ৪৬ প্যাকেট, বাকি সব প্যাকেট দেওয়া হয় রাখালগাছি এলাকায়। সামান্য এই প্যাকেট দেখে অনেকে ক্ষুব্ধ হন। প্যাকেটে ছিল ১০ কেজি মিনিকেট চাল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি তেল, ১ কেজি চিড়া, একটি সাবান, এক প্যাকেট মোমবাতি, এক প্যাকেট নুডলসসহ শুকনা খাবার।

কয়েক দিন ধরে বন্যায় ভাসছেন বেতকার আমিন শেখ (৬৫)। এর আগে একবার ১০ কেজি চাল পেয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া কিছু পাননি বলে মনে ক্ষোভ ছিল তাঁর। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৮-১০ দিন ধইরা বন্যায় ভাসতাছি। কেউ আমাগো খোঁজ নেয়নি। তয় আজ মনটা কিছুটা বালা লাগছে। ঘরে স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়েসহ আটজনের সংসার। অন্যের জমি চষে খাই। কীভাবে চলি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আজকের এই খাবার প্যাকেট পাইয়া মনডা খুব ভালো লাগতাছে।’

আবুল ব্যাপারী (৬৮) বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী, দুই ছেলে, ছেলের বউসহ ছয়জনের সংসার। চারদিকে বন্যার পানিতে সবজি বা ফসলের খেত সব তলিয়ে গেছে। কোনোরকম আছি। বড় সমস্যা, কোথাও যেতে পারছি না। বন্যায় সব তলায় যাওয়ায় গোয়ালন্দ যেতে হলে ফিরে আসতে দিন শেষ হয়ে যায়। একবার নৌকায় সকালে গিয়ে ওই নৌকা ফিরে আসে বিকেলে। এ জন্য না খেয়ে থাকলেও কেউ বাইরে যাই না।’

রাখালগাছির মোনেকা বেগম, আলামিনসহ কয়েকজন বলেন, ‘চারদিকে বন্যার পানির কারণে সারা রাত জেগে থাকতে হয়। গরু-ছাগল নিয়ে সবাই চুপচাপ রাতভর জেগে বসে থাকি। রাতে যদি ডাকাত দল এসে হানা দিয়ে নৌকা ভিড়িয়ে সব নিয়ে যায়, তখন তো আমাদের মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম জানান, গোয়ালন্দ শহর থেকে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের নাম হচ্ছে বেতকা ও রাখালগাছি। এর আগেও এলাকার ইউপি সদস্য আবু বক্কারের মাধ্যমে কিছু সাহায্য করা হয়েছে। এলাকার মানুষের অভাবের বিষয়টি ভাবলে এ সাহায্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে এসে ইউএনও আমিনুল ইসলাম জানান, বেতকা ও রাখালগাছির মানুষের জন্য আজ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১০০ প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। তবে আরও সহযোগিতা দেওয়া হবে। এ ছাড়া দেবগ্রামের অন্যান্য এলাকা ও দৌলতদিয়ার মোট ৬৫০ জনকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে।