Thank you for trying Sticky AMP!!

বরিশালে কোভিডে মোট মৃত্যুর ৮১ ভাগ গত ২৫ দিনে

প্রতীকী ছবি

জুন মাসে বরিশালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এ মাসের ২৫ দিনে কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৭ জন, যা বিভাগে মোট মৃত্যুর ৮১ দশমিক ১৯ ভাগ। বিভাগে গত ৯ এপ্রিল কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

আর বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১১৪ জন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিভাগে মোট আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৮০ জনে। মোট আক্রান্তের ৭০ দশমিক ২৯ ভাগের সংক্রমণ ঘটেছে জুনের শেষ ২৫ দিনে। এই সংখ্যা ১ হাজার ৮৭৩ জন।
এদিকে বরিশাল নগরের ২৭টি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করে দুটি ওয়ার্ডকে পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্তের এক সপ্তাহ পার হলেও তা কার্যকর হয়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও নগরের সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, জুনে সংক্রমণের যে গতি, তাতে দ্রুত এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ‘সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে ক্রমেই আমরা অসহায় হয়ে পড়ছি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা যদি অসহায়বোধ করে হাল ছেড়ে দিই, তবে তা আমাদের জন্য খুব খারাপ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।’
জুনে সংক্রমণ বেশি, মৃত্যুও বেশি
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব বলছে, গত ৯ এপ্রিল প্রথমবার বরিশাল বিভাগে কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই দুজনের মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর জুনে বিভাগের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে বাড়ে মৃত্যুর সংখ্যা। গতকাল রাত পর্যন্ত বিভাগের ছয় জেলায় ২ হাজার ৩৮০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মোট আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ২ দশমিক ২২ ভাগ মারা গেছেন। এই সংখ্যা ৫৩। এর মধ্যে জুনেই মারা গেছেন ৪৭ জন।
বিভাগে মোট আক্রান্তের মধ্যে বরিশাল জেলায় সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৩৩৮ জন। এর মধ্যে আবার বরিশাল নগরেই আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩৩ জন। এর বাইরে পটুয়াখালী জেলায় আক্রান্ত ২৮৮, ভোলায় ২১৪, পিরোজপুরে ১৭৩, বরগুনায় ১৭৮ ও ঝালকাঠিতে ১৮৮ জন।
এপ্রিলে বিভাগে প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫–এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। মে মাসে সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ ৪০ জন ছিল। আর জুনের শুরুর দিকে তা ছিল ৭০ জন। এরপর ৯৫ থেকে হয় ৯৮ জন। পরে ১৪ জুন তা এক লাফে সর্বোচ্চ ১৩৩ জনে পৌঁছায়।
৮১ দশমিক ১৯ ভাগের মৃত্যু জুনে
কোভিড–১৯–এ বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৩ জন রোগী। এর মধ্যে জুনের শেষ ২৫ দিনে মারা যান ৪৩ জন, যা মোট মৃত্যুর ৮১ দশমিক ১৯ ভাগ। বাকি ১০ জনের মৃত্যু হয় ৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মের মধ্যে। মারা যাওয়া ৫৩ জনের মধ্যে বরিশাল নগরসহ জেলায় ২০ জন, পটুয়াখালীতে ১৬ জন, ঝালকাঠি জেলায় ৮ জন, পিরোজপুরে ৪ জন ও ভোলায় ৩ জন এবং বরগুনা জেলায় ২ জন।
বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, বিভাগে শনাক্ত রোগীর পাশাপাশি উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত ২৮ মার্চ থেকে বিভাগের হাসপাতাল ও বাড়িতে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১১৪ জন। এর মধ্যে ১৪ জন বাড়িতে এবং বাকি ১০০ জন বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে। তবে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনাভাইরাস ওয়ার্ডে এখনো কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ৮১। তাঁদের মধ্যে ৩০ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে। অন্যরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রতিদিন কোভিড–১৯–এ আক্রান্তদের মৃত্যুর হিসাব দেওয়া হলেও উপসর্গে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হিসাব দেওয়া হয় না।
লকডাউন সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি
সংক্রমণের হার বিবেচনায় নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টিকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড দুটিকে পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউনের জন্য গত ১৮ জুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও সে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়নি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, জুনে বরিশাল বিভাগে সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সংক্রমণের হার বেড়েছে। একই সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।
দুটি ওয়ার্ডকে লকডাউনের ব্যাপারে শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, সবকিছুর প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া গেলেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।