Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে

বাংলাবাজার ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘাট এলাকায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বাংলাবাজার ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ফেরিতেই গাদাগাদি করে পারাপার হচ্ছেন মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকার পরও অনেককেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে দেখা যায়নি। আজ বেলা ১১টায় বাংলাবাজার ঘাটে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী নদী পারাপারের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।

সকাল থেকে প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরম থাকায় যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহান। অনেকেই ঘাটে এসে অসুস্থ্ হয়ে পড়ছেন। ফেরিতে গরমের মধ্যে গাদাগাদি করে পদ্মা পারাপারে আবারও দুর্ঘটনা আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঈদের দুদিন আগে ১২ মে ফেরিতে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ, গরম ও হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে ৫ যাত্রী নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।

জানতে চাইলে আজ বেলা ১১টায় বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটে মানুষ আর মানুষ। ওপার থেকে যেমন আসছেন, এপার থেকেও তেমনই যাচ্ছেন। উভয় পাড়েই ভিড়। এত গরম আর তীব্র রোদের কারণে যাত্রীরা ঘাটে অসুস্থ্ হয়ে পড়ছেন। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আশিকুর রহমান আরও বলেন, গত চার দিনের তুলনায় আজ যাত্রীর চাপ বেশি। বড় ফেরিতে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার, ছোট ফেরিতে ৫০০ থেকে ৭০০ যাত্রী বহন করা হচ্ছে। যানবাহনের তেমন চাপ নেই। ঘাটে আসামাত্রই তাঁরা ফেরিতে উঠতে পারছেন।
বিআইডব্লিউটিসি ঘাট সূত্র জানায়, ঈদের সাত দিন আগে ও ঈদের একদিন পর থেকে ঘাটে পদ্মা পারাপারের জন্য ভিড় করছেন যাত্রীরা। যানবাহন ও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ থাকায় নৌপথে চলাচলরত ১৮টি ফেরি চালু রাখা হয়। আজ সকাল থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকায় যানবাহনের তুলনায় যাত্রীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। ঘাটে পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। এরপরও যাত্রীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষকে।

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে

আজ সকালে সরেজমিনে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাট এলাকায় যেমন রোদ, তেমনই ধুলা। ঘাটে আসা যাত্রীরা ভ্যাপসা গরমে ক্লান্ত। অনেকেই অসুস্থ্ হয়ে পড়ছেন। তবুও ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। এসব কর্মমুখী যাত্রীরা রাজধানীর ঢাকায় ফিরছেন। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা ইজিবাইক, মাহিন্দ্র, থ্রি–হুইলারসহ ছোট ছোট যানবাহনে চড়ে ফেরিঘাটে আসছেন। আবার ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের ভিড়ও আছে ফেরিতে।

যাত্রীরা ঘাটে এসে থ্রি–হুইলারসহ ছোট ছোট যানবাহনে চড়ে যাচ্ছেন গন্তব্যে। করোনার সংক্রমণ রোধে এই যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো প্রবণতা নেই। আনসার, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ঘাটে আসা যাত্রীদের মাস্ক পরতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকিং করে বারবার বলা হলেও এসব নির্দেশ কেউ মানছেন না।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে আসা ঢাকামুখী যাত্রী আসাদ শিকদার বলেন, ‘ঈদ দেশে ভালো কেটেছে। এখন ঢাকায় ফিরতে হবে। আম্মারে নিয়ে ঘাটে আসছি। গরমে আম্মা অসুস্থ্ হয়ে পড়ে। পরে আনসার আম্মার মাথায় পানি দেয়। একটু সুস্থ্ হওয়ার পর তারাই ডেকে ফেরিতে তুলে দেয়।’

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে

বরিশাল থেকে আসা যাত্রী বাশার মিয়া বলেন, ঘাটে মানুষের খুব ভিড়। ফেরিতে পা রাখার জায়গা নেই। এত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আর চলা যায় না। এর মধ্যে গরম। গরমে মাস্ক পরলে দম আটকে মানুষ মারা যাবে।

ঘাটে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনেক বলি। হ্যান্ড মাইক দিয়ে সারাক্ষণই প্রচার করি। কিন্তু যাত্রীরা কেউ কথা শোনে না। তারা ইচ্ছামতো চলে। কিছু বললে উল্টো ঝামেলা করে। এভাবে কি বলে বলে আর নিয়ম মানতে বাধ্য করা যায়?’

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভিড় বেশি থাকলেও যাত্রীদের বেশি সময় ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। আমাদের সব কটি ফেরিই চালু আছে। আমরা যাত্রীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করছি। একই সঙ্গে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আমরা বিভিন্নভাবে প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছি। যাত্রীদের মুখে মাস্ক ব্যতীত কাউকে ফেরিতে তোলা হচ্ছে না।’