Thank you for trying Sticky AMP!!

বাগেরহাটে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নিয়ে দুর্ভোগে আট গ্রামের মানুষ

জোয়ারে এখনো প্লাবিত হচ্ছে নদীতীরের কয়েকটি গ্রাম। আজ বৃহস্পতিবার বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালি এলাকা। ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দিয়ে জোয়ারের সময় পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট। আম্পান আঘাত হানার এক সপ্তাহ পার হলেও দিনে দুবার জোয়ারের সময় প্লাবিত হচ্ছে জেলার তিন উপজেলার আটটি গ্রাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ হিসেবে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হলেও দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ কমছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে, জেলায় ৩০০ মিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ এবং ৮ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শরণখোলা উপজেলার ৩৫/১ পোল্ডারের ঝুঁকিপূর্ণ বগী-গাবতলার এলাকার ২ কিলোমিটার প্রায় প্রতিটি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় স্থানীয় বাঁধ নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে জেলার শরণখোলা উপজেলার তিনটি, রামপাল উপজেলার তিনটি এবং সদর উপজেলার দুটি গ্রাম দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়।

পাউবো বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিইআইপি) নামে প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। জেলায় ওই প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে শরণখোলা অংশে নদীভাঙনের কারণে নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ না হওয়ায় বগী এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটারের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। তবে অস্থায়ীভাবে সেখানে রিং বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন সময় নদীভাঙনের কারণে ওই রিং বাঁধ ভাঙছে। আম্পানের প্রভাবে জোয়ারে তোড়ে বাঁধের ওই অংশই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই এলাকায় এখন সেনাবাহিনীর উদ্যোগে জরুরি ভিত্তিতে রিং বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এতে গ্রামগুলো আর প্লাবিত হবে না।

তবে পাউবোর বিভিন্ন পোল্ডারের আওতায় না থাকলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নদীতীরের অন্তত ২০টি পয়েন্টে গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙেছে। আম্পানে বাঁধ উপচে এবং এসব স্থান দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছিল বহু এলাকা। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নদীতীরের গ্রাম রক্ষা বাঁধগুলো তৈরি করা হয়। বর্তমানে পাউবোর বাঁধের শরণখোলা উপজেলার একটি অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। সদর ও রামপাল উপজেলার প্লাবিত এলাকার বাঁধগুলোও নির্মাণে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে।

আম্পানে বাগেরহাটে বেড়িবাঁধ ও রাস্তা উপচে এবং কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে মোট ৪ হাজার ৬৩৫টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির তথ্য জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। ঝড়ে জেলায় সবচেয়ে বেশি মৎস্য খাতের ক্ষতি হয়েছে বলছে প্রশাসনও।

জেলা মৎস্য বিভাগের হিসাবে, বাগেরহাট জেলায় ৭৮ হাজার ১০০টি মাছের ঘের রয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৩৩ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ কনক।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক রঘুনাথ কর প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জোয়ারের জলোচ্ছ্বাস ও অতিবর্ষণে বাগেরহাটের মাঠে থাকা গ্রীষ্মকালীন সবজি, আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বীজ ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বলছেন, তাঁরা এখনো কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার চাষি ওহাব শেখ বলেন, তাঁরা ঘেরে মাছ ও ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ করেন। কিন্তু ঝড়, অতিবৃষ্টি, বাতাসে সবজি ও মাছ—সবই ক্ষতি হয়েছে। করোনার কারণে এমনিতেই ভালো দাম মিলছিল না, তার ওপর এই দুর্যোগে সব শেষ। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তারা সহযোগিতা পাচ্ছে। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫০ বান্ডিল ঢেউটিন বাবদ ১৫ লাখ টাকা, নগদ ৩ লাখ টাকা এবং ৩০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিক শুকনো খাবার দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুই লাখ টাকার গোখাদ্য এবং দুই লাখ টাকার শিশুখাদ্য বিতরণ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্যচাষিদের জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে রামপাল উপজেলার ৩ হাজার ৬০০ জনের মধ্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে।