Thank you for trying Sticky AMP!!

বানভাসিদের পাশে একজন ফারমিছ

সিলেট নগরেরফারমিছ আক্তার বন্যা শুরুর পর থেকে অন্তত ১৩ লাখ টাকার খাদ্যসামগ্রী, প্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য,টিনসহ ঘর তৈরির উপকরণ বিতরণ।

ফারমিছ আক্তার

কারও ঘর ভেঙেগেছে, তিনি হাজির টিন ও নগদ টাকা নিয়ে। কারও ভেসে গেছে হাঁড়িপাতিল, তাঁদের তুলে দিচ্ছেনডেকচি, থালাবাসন। আবার খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটে থাকা মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেনচাল, ডালসহ শুকনা ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি। তালিকায় আছে ওষুধপথ্যও।

সিলেট ও সুনামগঞ্জেস্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এ রকম আরও উদাহরণ আছে। এসব গল্পের কেন্দ্রীয়চরিত্রে যিনি, তিনি ফারমিছ আক্তার (৪১)। বাসা সিলেট নগরের মীরের ময়দান এলাকায়।

গত ১৫জুন বন্যা শুরু হলে মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। অনেকে পড়েন খাদ্যসংকটে। এ খবর পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রসফরে থাকা ফারমিছ মানুষের পাশে দাঁড়াতে দ্রুত দেশে চলে আসেন। ১৯ জুন সকালে সিলেটে পৌঁছেসেদিনই নিজে রান্না করে নিয়ে যান বানভাসি মানুষের কাছে। এর পর থেকে প্রতিদিনই তিনিবন্যায় বিপাকে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।ফারমিছেরসঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে বন্যা শুরুর পর থেকেই তিনি অন্তত১৩ লাখ টাকার খাদ্যসামগ্রী, প্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য, টিনসহ ঘর তৈরির উপকরণ বিতরণ করেছেননানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে। এর বাইরে আড়াই শ পরিবারের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকাও বিলিকরেছেন। ২৮টি বিধ্বস্ত ঘর নতুনভাবে মেরামতের জন্য নগদ পাঁচ হাজার টাকার পাশাপাশি টিনসহযাবতীয় নির্মাণসামগ্রী বানভাসি মানুষকে তুলে দিয়েছেন। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত একটিমসজিদ নির্মাণেও দিয়েছেন টিনসহ যাবতীয় উপকরণ।এসব কাজে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন স্বামী,দুই মেয়েসহ চার বান্ধবীকে।সিলেটের গোয়াইনঘাট,কানাইঘাট, সদর উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্নগ্রামে অন্তত তিন হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, পোশাক, হাঁড়িপাতিল ও ওষুধপথ্যবিতরণ করেছেন ফারমিছ আক্তার। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ কাজ অব্যাহতথাকবে বলে ফারমিছ জানিয়েছেন।

সিলেট নগরেরশিবগঞ্জ এলাকায় ফারমিছের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তিনি এমসি কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তরসম্পন্ন করেন। ১৩ বছর আগে বিয়ে হয় নগরের মীরের ময়দান এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী রাফেজ-উলহকের (৪২) সঙ্গে। পাঁচ বছর আগে ফারমিছ রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। করোনাকালেসেটি বন্ধ করে সেখানে নিজে রান্না করে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাবার বিলিয়েছেন,অনেককে দিয়েছেন নগদ টাকাও। এ ছাড়া নিজ উদ্যোগে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামতসহ নানা সামাজিককাজ করেও তিনি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন।

ফারমিছ স্মৃতিচারণাকরে বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার গোয়াইনগাঁওয়ের একটা পরিবারের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওই পরিবারেরকর্তা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে শয্যাশায়ী। স্ত্রী মারা গেছেন বেশ আগে। পরিবারেতিন মেয়ে, সবার বয়স ৮ থেকে ১১ বছরের মধ্যে। গ্রামের মানুষের সহায়তায় পরিবারটি চলে।বন্যার পানিতে ওই পরিবারের ঘরটি বিধ্বস্ত হয়। ভেসে যায় হাঁড়িপাতিল, কাপড়চোপড়। ভয়াবহবন্যায় সবাই যখন অসহায়, তখন এ পরিবার আরও অসহায় হয়ে পড়ে। তাদের বিধ্বস্ত ঘরটি মেরামতেরজন্য টিনসহ যাবতীয় উপকরণ কিনে দেওয়ার পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া পর্যাপ্তখাদ্য, পোশাক ও হাঁড়িপাতিলও দিয়েছেন।

ফারমিছ বলেন,‘কয়েক দিন আগে ভারতের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি গ্রামে নৌকায় করে গিয়েছিলাম।সন্ধ্যায় সে গ্রামে পৌঁছাই। খাদ্য ও নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা শেষে ফেরার পথে শুরু হয়তুমুল ঝড়বৃষ্টি। আমাদের নৌকায় ছই ছিল না। বৃষ্টির পানি নৌকায় জমা হচ্ছিল। ঘন অন্ধকারেমাঝিও একসময় পথ হারিয়ে ফেলেন। আতঙ্ক আর ভয় ঘিরে ফেলে একসময়। বারবার মনে হচ্ছিল, এইবুঝি নৌকা ডুবল! পরে বৃষ্টি কিছুটা থামলে মাঝি নিরাপদে পৌঁছে দেন। এখন মানুষের পাশেদাঁড়ানোর পাশাপাশি নিজের নিরাপত্তার বিষয়টিও খেয়াল রাখছি।’

ফারমিছ আক্তারআরও বলেন, এই কয় দিনে সরেজমিন বানভাসি মানুষের কত কত করুণ মুখের সঙ্গে দেখা হয়েছে,তা বলে শেষ করা যাবে না। ধসে পড়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন মানুষ, কয়েক দিনের অনাহারীমুখ করুণভাবে চেয়ে আছে। চুলা ভেসে যাওয়ায় রান্নাবান্না বন্ধ, অনেকের তোশক, পোশাক ভেসেগেছে। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এসব দৃশ্য দেখে চোখেরপানি ধরে রাখা ছিল দায়। তবে এটা দেখে এখন খুবই শান্তি লাগছে যে দেশ-বিদেশের অনেক মানুষবানভাসিদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।