Thank you for trying Sticky AMP!!

বাসায় খাবার নেই, বাড়ি ছাড়ে কিশোরী

চাঁদপুর

ওই কিশোরীর (১৩) বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয় বছর কয়েক আগে। বাবা খোঁজ রাখেন না তার। সে থাকে মায়ের সঙ্গে। এ বাড়ি-ও বাড়ি কাজ করে মা যা পান, তা দিয়েই চলে মা-মেয়ের সংসার। করোনাভাইরাসের কারণে মায়ের কাজ বন্ধ। রোজগার নেই। ত্রাণও জোটেনি।

তিন দিন ধরে খেতে পায়নি কিশোরীটি। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে পাশের উপজেলায়। তখন রাত আটটা। সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি করায় নজরে আসে থানা-পুলিশের। তার কষ্টের কথা শোনে সেখান থেকে তাকে থানায় এনে খেতে দেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর কিছু খাদসামগ্রীসহ তাকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেন। ব্যবস্থা করে দেন আরও কিছু ত্রাণসামগ্রীরও।


ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের পানির ট্যাংক এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে। পরিবারের বরাত দিয়ে মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার আইচ বলেন, ওই কিশোরীর বাড়ি জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর গ্রামে। সে ওই গ্রামের সাজু মিয়া ও নুরুন্নাহারা বেগমের মেয়ে। তাঁদের সংসার ভেঙে গেছে আট-দশ বছর আগে। শৈশব থেকেই সে তার মায়ের কাছেই থাকে। আরেকটি বিয়ে করে তার বাবা থাকেন ঢাকায়। মেয়েটির খোঁজ রাখেন না তিনি। গৃহকর্মী মা টুকটাক কাজ করে যা পান, তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দিন ধরেই তার মায়ের উপার্জনও বন্ধ। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাদের। তারা ত্রাণসামগ্রীও পায়নি।


ওসি স্বপন কুমার আইচ আরও বলেন, তিন দিন ধরে ওই কিশোরীর ঘরে খাবার ছিল না। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ওই কিশোরী গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মাকে না জানিয়েই বাড়ি ছাড়ে। ভুল করে চলে আসে মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরে। রাত আটটার দিকে উপজেলা সদরের পানির ট্যাংক এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে। বিষয়টি নজরে আসে থানা-পুলিশের। মেয়েটিকে ঘোরাঘুরির কারণ জিজ্ঞাসা করে পুলিশ জানতে পারে তার কষ্ট আর অভাবের কাহিনি। সেখান থেকে উদ্ধার করে থানায় এনে তাকে খেতে দেওয়া হয়। এরপর তাঁর (ওসি) গাড়িতে করে কিছু খাদ্যসামগ্রীসহ মেয়েটিকে হাজীগঞ্জে নিয়ে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেন।
ওই উপজেলার দ্বাদশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমকে ডেকে পরিবারটির জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করারও অনুরোধ করা হয়।


ওসির মুঠোফোনের মাধ্যমে ওই কিশোরী প্রথম আলোকে বলে, ‘তিন দিন ধইরা ঘরে খাওন নাই। করোনার লইগা মায়ের কাম না থাওনে আমাগো এই অবস্থা। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পাইরা কাম জোগাড়ের জন্য বাড়ি ছাড়ছিলাম। চাইছিলাম, ঢাকায় গিয়া গার্মেন্টেসে কাজ লমু। হেইডা আর অইল না। ভুল কইরা মতলবে চইলা যাই। তয় পুলিশ আমারে বাঁচাইয়া দিল। খাওনও দিছে। তাগো জন্য দোয়া করি।’

কিশোরীটির মা নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘করোনা আওনের পর কেউই কাম দেয় না। ঘরে বইয়া আছি। এক দিন খাই তো তিন দিন না খাইয়া থাহি। খাওন দিতে না পারায় পেডের জ্বালায় আমার লগে রাগ কইরা মাইয়াডা বাড়ি ছাইড়া গেছে। পুলিশ আমার মাইয়াডারে বাঁচাইছে। নাইলে কী বিপদ অইত তা আল্লায়ই জানেন।’

হাজীগঞ্জের দ্বাদশ ইউপির চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, ওই পরিবারের এত কষ্টের কথা তিনি জানতেন না। মেয়েটি ও তার মায়ের জন্য ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করবেন তিনি।