Thank you for trying Sticky AMP!!

বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন বেড়িবাঁধ ভাঙা মানুষ

সংস্কারকাজ চলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে। শুক্রবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া এলাকায়

সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেঙে যাওয়া সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধগুলোর। আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে এসব বেড়িবাঁধ। ফলে ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়া মানুষ তাঁদের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাঁধগুলোর সংস্কারকাজ চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০২০ সালর ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্পানের আঘাতে খোলপেটুয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। গাছপালা, ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে দুমড়েমুচড়ে পড়ে। ফসলের খেত আর মাছের ঘের ভেসে যায়। বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয় আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের ৩৯টি গ্রাম। দুই ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের ৭০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।

প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল বলেন, আম্পানে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, বাঁধ ভেঙে হয় তার শতগুণ বেশি হয়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আগে থেকেই কুড়িকাউনিয়া লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশের বেড়িবাঁধটি খুবই জরাজীর্ণ ছিল। ওই স্থান থেকে প্রতিবছরই বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ভাঙনের পর বাঁধ রক্ষার্থে সংস্কারকাজ করা হলেও তা টেকসই না হওয়ায় এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটান।

আম্পানে সাতক্ষীরা ও খুলনায় ভেঙে যাওয়া ১৩টি স্থানের বেড়িবাঁধ সংস্কারে সেনাবাহিনী কাজ করবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড শাখা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার ১১টি ও খুলনার কয়রার ২টি স্থানে কাজ করবে তারা। এর মধ্যে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, হরিষখালি ও শ্রীউলার হাজরাখালী পয়েন্টে বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে দ্রুতগতিতে। তিনি আরও বলেন, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে আশাশুনির ভেঙে যাওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের চারটি স্থানে কাজ করছে সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে হরিষখালীর ভেঙে যাওয়া বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। তবে আশাশুনি সদর উপজেলার দয়ারঘাট, প্রতাপনগরের রুইয়ার বিলসহ অন্যান্য ভাঙনকবলিত স্থানগুলোর সংস্কারকাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, আশাশুনি উপজেলার প্রায় ২৪ কিলোমিটার নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। প্রলয়ংকরী ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রতাপনগর ইউনিয়নে চাকলা, কোলা হিজলিয়া, নাকনা, কুড়িকাহুনিয়া, রুইয়ারবিল, সুভদ্রাকাটিসহ বিভিন্ন এলাকা কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে পুরো ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যায়। শ্রীউলার হাজরাখালী বাঁধ ভেঙে সম্পূর্ণ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট, জেলেখালী গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে দয়ারঘাট ও জেলেখালী প্লাবিত হয়। ঝড়ে ১৭ হাজার ২০০টি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এ ছাড়া ৬ হাজার ২৫০টি আধা পাকা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিধ্বস্ত হয় ৩০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। উপজেলার অর্থনৈতিক মূলভিত্তি ৮ হাজার ৬৯৮টি চিংড়িঘের প্লাবিত হয়ে শত শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৫ হাজার ৮০০ নারী, ২৫ হাজার ২০০ পুরুষ, ৩ হাজার ১০০ শিশু ও ৮৩৫ জন প্রতিবন্ধী বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নেন। ভেঙে যাওয়া বাঁধের কাজ শুরু হওয়ায় এখন তাঁরা ধীরে ধীরে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলিফ রেজা বলেন, দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বেড়িবাঁধগুলোর সংস্কারকাজ। সংস্কারের ফলে ভাঙা বেড়িবাঁধগুলো আগের মতো দৃশ্যমান হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এসব বাঁধের কাজ শেষ হবে। বাঁধের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী তাঁদের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।