Thank you for trying Sticky AMP!!

বিদেশ যাচ্ছে গোয়ালগাদ্দা শিম

ঠেলাগাড়ি ও ঝুড়ি ভরে শিম নিয়ে আসছেন চাষিরা। একেকজনের কাছে ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি পর্যন্ত শিম। দরদাম করে সেই শিম কিনে নিচ্ছেন পাইকারেরা। এরপর বস্তায় ভরে তোলা হচ্ছে ছোট–বড় ট্রাকে। পুরকায়স্থ বাজার থেকে এই শিম চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও যাচ্ছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত ‘গোয়ালগাদ্দা’ নামের এই শিম।

সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত ‘গোয়ালগাদ্দা’ নামের এই বিশেষ জাতের শিমটি বেশি উৎপাদিত হয় গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ ও লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নে। ঢাকাদক্ষিণের পুরকায়স্থ বাজার ও লক্ষণাবন্দের চৌধুরী বাজারে সপ্তাহে চার দিন শিমের হাট বসে। এসব বাজার থেকে পাইকারদের হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

পুরকায়স্থ বাজারে চারজন পাইকারি ক্রেতা ও তিনজন শিমচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকাদক্ষিণ ও লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের আটটি গ্রামে গোয়ালগাদ্দা শিমের বেশি চাষ হয়। ইউনিয়নের চাষিরা চার থেকে পাঁচ বিঘা জমিতে শিমের চাষ করেন। সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে ৪০০ থেকে ৬০০ কেজি শিম উৎপাদিত হয়। বাজারে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন পাইকারি ক্রেতা কৃষকদের কাছ থেকে শিম সংগ্রহ করে সিলেটের সবজি বাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান। সপ্তাহে চার দিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভিড় করেন। সিলেটের বাজারগুলোয় এ শিম কেজিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত বছর উপজেলার ৯১০ হেক্টর জমিতে গোয়ালগাদ্দা শিমের চাষ হয়েছিল। এবার ৯৭০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। উপজেলায় দুই শতাধিক শিমের চাষি রয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ জন কৃষক ঢাকার ভেজিটেবল অ্যান্ড ফুডস এক্সপোর্ট নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। তাঁরা উন্নত মানের বাছাই করা শিম কৃষকদের কাছ থেকে কিনে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। সংগঠনটির মাধ্যমে দেশের বাইরে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ কেজি রপ্তানি হয়ে থাকে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আট থেকে দশ ইঞ্চি লম্বা ও দুই থেকে তিন ইঞ্চি প্রস্থের এই শিম স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় ও সুস্বাদু। অন্য যেকোনো শিম থেকে এর চাহিদাও বেশি।

ঢাকাদক্ষিণের পুরানপাড়া গ্রামের হাসানুর রহমান এবার ছয় বিঘা জমিতে শিমের আবাদ করেছেন। বুধবার পুরকায়স্থ বাজারে তিনি ৮০০ কেজি শিম বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন শিমের দাম একটু কমেছে। দেড় মাস আগে পাইকারি বাজারে কেজিতে ১২০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। এখন সেটি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাসানুর বলেন, ‘অনেক আগে থেকে শিমের চাষ করি। এবার জমির পরিমাণ বাড়িয়েছি। এতে অনেক লাভ হয়েছে।’

পাইকারি ক্রেতা আবদুল হক বলেন, ঢাকাদক্ষিণ ও লক্ষণাবন্দের দুটি বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টন করে শিম বিক্রি হয়। একেকজন পাইকার দুই থেকে তিন টন পর্যন্ত শিম কিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান।

ব্যবসায়ী লেচু মিয়া বলেন, অক্টোবরের শেষ দিক থেকে দুই বাজারে শিম উঠতে থাকে। সে সময় দাম একটু চড়া থাকে। চাহিদাও থাকে। বর্তমানে সবজি হিসেবে শিম বিক্রি হলেও আগামী জানুয়ারি থেকে বিচিসহ শিম বিক্রি শুরু হবে। শিমের বিচি সে সময় কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খায়রুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ও লক্ষণাবন্দ ইউনিয়ন টিলা এলাকা হওয়ায় গোয়ারগাদ্দা শিম ভালো উৎপাদিত হয়। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। পাশাপাশি বিষমুক্ত সবজি চাষে উৎসাহিত করছি।’ এতে দেশের বাইরেও বিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।