Thank you for trying Sticky AMP!!

বিদ্যুৎ বিলের ভর্তুকির সুফল পাচ্ছেন না কৃষকেরা

জমিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন কৃষক জাহাঙ্গীর আলম। মংলা ডুবের মাঠ, তারাগঞ্জ, রংপুর, ৯ এপ্রিল

রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত সেচ পাম্পের মালিকেরা সেচ বাবদ বিদ্যুৎ বিলের ওপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি পেলেও প্রান্তিক কৃষকেরা এর সুফল পাচ্ছেন না। কৃষকদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে সেচ পাম্পের মালিকেরা সেচের খরচ বাড়িয়ে নিচ্ছেন।

তারাগঞ্জের সয়ার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম বলেন, ‘বোরো উৎপাদনের জন্য সরকার তো বিদ্যুৎ বিলের ওপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। আমার জানামতে, সেচ পাম্পের মালিকেরা এ সুবিধা একাই ভোগ করছেন। তাঁরা কৃষকদের ভর্তুকির এ সুবিধা দিচ্ছেন না। উল্টো অতিরিক্ত সেচের খরচ নিচ্ছেন।’

তারাগঞ্জ সেচ কমিটির সদস্যসচিব ও বিএডিসি রংপুরের কার্য সহকারী মো. শহিদুল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, এক একর জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎ খরচ হবে এলাকাভেদে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। প্রতি একরে সেচ পাম্পচালকের মজুরি এক হাজার টাকা করে নিলেও প্রতি একরে খরচ পড়বে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। বৃষ্টি হলে খরচ আরও কমবে।

তারাগঞ্জ সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার যেহেতু বিদ্যুৎ বিলের ওপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। সেই ভর্তুকির টাকা অবশ্যই কৃষককে ছাড় দিয়ে সেচের খরচ নিতে হবে। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেলে সেচ পাম্পের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’

রংপুর-২ পাগলাপীর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তারাগঞ্জ উপজেলার বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প আছে ৯৭৩টি ও বদরগঞ্জে ১ হাজার ৬২০টি। দুই উপজেলার কৃষি বিভাগ জানায়, এসব সেচ পাম্পের মাধ্যমে সেচসুবিধা নিয়ে তারাগঞ্জের কৃষকেরা এ বছর ৭ হাজার ৮৭০ হেক্টর ও বদরগঞ্জে কৃষকেরা ১৬ হাজার ২২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করেছেন।

আজ শুক্রবার তারাগঞ্জের উপজেলার ইকরচালী, হাড়িয়ারকুঠি, সয়ার, আলমপুর, কুর্শা ও বদরগঞ্জের দামোদরপুর, মধুপুর, গোপালপুর, কুতুবপুর, বিষ্ণুপুর, লোহানীপাড়া, রাধানগর, রামনাথপুর, গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ইরি-বোরোর বিভিন্ন মাঠ ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর সেচ পাম্পের মালিকেরা বেশি টাকা চেয়েছেন। এলাকাভেদে এই বৃদ্ধি একরে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা।

সকাল সাড়ে নয়টায় তারাগঞ্জের পূর্বদোলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বোরোর জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন মাটিয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক হামিদুল হক। তিনি বলেন, ‘বাবা, হামার কৃষকের কষ্ট তো কায়ও বোঝে না। এবার তো সেচ পাম্পের মালিক দোনে (২৪ শতকে) ২০০ টাকা বেশি ছাড়া পানি দিবার চাওছে না। কওছে ধানের দাম বাড়ছে, ওই জন্য পানির দামও বাড়া হইছে। গত বছর এই ৫০ শতক জমিত বোরো খেতোত পানি দিতে ২ হাজার ৬০০ টাকা নাগছে। এবার চাওছে ৩ হাজার ২০০ টাকা চাওছে।’

তারাগঞ্জের মংলা ডুবের মাঠে জমিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন বাচ্চুরপাড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘ভাই, হামার কৃষকের খুব যন্ত্রণা। দুইবার ওষুধ দিনু মাজরা পোকা পালাওছে না। সরকার যে বোরো চাষ করলে ভর্তুকি দেয়, হামরা তো তাক জানি না। হামাক তো কায়ও কোনো দিন কয়ও নাই। আইজে তোমারটে শুননু।’

বদরগঞ্জের আমরুলবাড়ি মাঠে কথা হয় ওই গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মুই শুনছুং বোরো খেতোত পানি দেওয়ার জন্যে সরকার কারেন্ট বিলের ওপর ১০০ টাকার মধ্যে ২০ টাকা ছাড় দেয়। কিন্তু ওই টাকা তো সেচ পাম্পের মালিকেরা খায়। হামার মতোন কৃষকোক তো দেয় না। একরে ছয় হাজার টাকার কম হামাক ওরা পানিও দেয় না।’

ওই মাঠেই জমিতে রাসায়নিক সার ছিটাচ্ছেন আমরুলবাড়ি গ্রামের বৃদ্ধ মোফাজ্জল হোসেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘কষ্ট করি ধান আবাদ করি হামরা আর লাভ কোনো খাও সেচ পাম্পের মালিক, ফড়িয়ারা। হামার কৃষকের কোনো রকম জীবন চলোছে। সরকার হামার ব্যাংক একাউন্টোত টাকা দিলে তো ভালো হয়।’

কথা হয় তারাগঞ্জের মাটিয়ালপাড়া গ্রামের সেচ পাম্পের মালিক এরশাদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কৃষকোক যে ভর্তুকির টাকার ভাগ দিবার নাগবে, এ কথা তো হামাক কায়ও কোনো দিন কয় নাই। কৃষকেরাও তো ভাগ চায় নাই। তাইলে টাকা দিমো কেন? মেলা দিন থাকি আকাশের পানি নাই। জমিত বেশি পানি খাওচে। এই জন্যে এবার একনা বেশি টাকা নেওছি।’

বদরগঞ্জের আমরুলবাড়ি গ্রামের সেচ পাম্পের মালিক ফজলুল হক বলেন, ‘ভর্তুকি তো কারেন্ট বিলোত হামার নামে দেয়। তাক কৃষকোক দিমো কেন? তোমরা তো হামার লাভে দেখোছেন, যন্ত্রণা বুঝোছেন না। সেচ পাম্প নিবার যেয়া দেখেন না কত হয়রানি।’

রংপুর-২ পাগলাপীর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিলের ওপর শতকরা ২০ টাকা ভর্তুকি সেচ পাম্পের মালিকেরা পাচ্ছেন। কৃষক পাচ্ছেন কি না, সেটা তো দেখার কাজ আমাদের নয়। জনপ্রতিনিধিদের উচিত কৃষকদের সচেতন করা। কৃষকদের উচিত সেচ পাম্পের মালিকের কাছ থেকে ভর্তুকির টাকা আদায় করা।’