বিয়ের ভোজ খেয়ে অসুস্থ শতাধিক: আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে সুনামগঞ্জে
সুনামগঞ্জে একটি বিয়েবাড়ির খাবার খেয়ে এক নারীর মৃত্যু এবং শতাধিক লোক অসুস্থ হওয়ার ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল সুনামগঞ্জ আসছে। আজ শনিবার রাতেই তাদের সুনামগঞ্জ পৌঁছার কথা।
এদিকে এ ঘটনায় মারা যাওয়া জলি রানী দেবের (৩৫) লাশের ময়নাতদন্ত শেষে আজ দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কেন্দ্রীয় শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। কনেপক্ষের আত্মীয় জলি রানীকে শুক্রবার বিকেলে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। পৌর শহরের ওয়েজখালী এলাকার সনজু দেবের স্ত্রী তিনি।
গত বুধবার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সাদকপুর গ্রামের প্রয়াত প্রাণেশ তালুকদারের মেয়ের সঙ্গে দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের দাইয়ারগাঁও গ্রামের মিহির তালুকদারের বিয়ে ছিল। বিকেলে দিরাই থেকে বরযাত্রীরা আসেন সদকপুর গ্রামে কনের বাড়িতে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বরযাত্রী, কনের বাড়ি ও দাওয়াতি লোকজন খাবার খান। রাতে খাবার খেতে খেতে প্রায় ১২টা বেজে যায়।
খাবার খাওয়ার পর রাতে কারও কোনো সমস্যা হয়নি। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনেকের পেটে সমস্যা শুরু হয়। প্রথমে গায়ে জ্বর আসে, একই সঙ্গে শরীরে ব্যথা দেখা দেয়। বমি ও পাতলা পায়খানা হয়। বর-কনেসহ অসুস্থ হয়ে পড়েন শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। এরপর একে একে সদর হাসপাতালে ৪৪ জন, দিরাই উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ৩৭ জন ভর্তি হন। পরে কয়েকজনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৮০ জন। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৩৯ জন এবং সিলেটে ৪১ জন আছেন। আজ দিরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ৩৪ জন সিলেট ওসমানীতে গিয়ে ভর্তি হয়েছেন।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে যাঁরা ভর্তি আছেন তাঁদের অবস্থা উন্নতির দিকে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এহসানুজ্জামান খান জানান, সিলেটে ভর্তি থাকা কনের মা ছন্দা রানী তালুকদারের অবস্থা গুরুতর। তিনি নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন। অন্যদের অবস্থা উন্নতির দিকে।
সাদকপুর গ্রামে যে বাড়িতে বিয়ে ছিল সেটি সুনামগঞ্জের সির্ভিল সার্জন আশুতোষ দাশের গ্রামে বাড়ি। কনে তাঁর চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে। তাই তিনি নিজেও ওই দিন পরিবার নিয়ে বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। তবে খাবার খাওয়ার পর তাঁর কোনো সমস্যা না হলেও তাঁর স্ত্রী আভা রানী দাস ও গাড়িচালক দরবেশ মিয়া অসুস্থ পড়েন। কনের চাচা যীশুতোষ দাশ বলেন, ‘বুধবার রাতে আমরা খেয়েছি, সমস্যা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। দেখা গেছে একই টেবিলে বসে খেয়েছেন এর মধ্যে কারও কিছুই হয়নি, আবার কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, বাড়ির পোষা কুকুরটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে, কারণ ওই খাবারের উচ্ছিষ্ট কুকুরও খেয়েছে। আবার থালা-বাসন যে পুকুরে ধোয়া হয়েছে সেই পুকুর থেকে পরে কিছু মাছ মরে ভেসে উঠেছে।'
যীশুতোষ দাশ বলেন, ‘কীভাবে কী হলো আমরা এখনো বিষয়টি বুঝতে পারছি না। আমাদের তো কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। গ্রামের সবাই মিলেমিশে আছি। সবাই মিলে বিয়ের অনুষ্ঠান করেছি।’
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেছেন, আজ ময়নাতদন্ত শেষে মৃত জলি রানী দেবের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এই হাসপাতালে এখন যাঁরা ভর্তি আছেন, তাঁদের অবস্থা উন্নতির দিকে।
সিভিল সার্জন আশুতোষ দাশ প্রথম আলোকে বলেছেন, খাবার থেকেই সমস্যা হয়েছে, এটা প্রথম থেকেই আমাদের ধারণা। আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল আজ দুপুরে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে। রাতেই তাদের পৌঁছার কথা। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
আরও পড়ুন
-
সফর বন্ধের ঘোষণা দিয়ে সাড়ে তিন মাসেই বিদেশ গেলেন প্রতিমন্ত্রীসহ ২৩ জন
-
কালও বন্ধ থাকবে যেসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
-
প্রশ্নপত্র ফাঁস: ঢাবির ৮৭ শিক্ষার্থীসহ সব আসামি খালাস, রায়ে যা বলেছেন আদালত
-
প্রধানমন্ত্রী স্বজন বলতে স্ত্রী-সন্তানকে বুঝিয়েছেন, ওবায়দুল কাদের
-
কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন মামুনুল হক