Thank you for trying Sticky AMP!!

বিয়ে করলেন সেই অদম্য ফাল্গুনী সাহা

সুব্রত মিত্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন অদম্য ফাল্গুনী সাহা

দুর্ঘটনায় দুই হাতের কবজি হারালেও দমে যাননি ফাল্গুনী সাহা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে গেছেন সামনে। দুই কনুইয়ের মাঝখানে কলম ধরে লিখে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে প্রমাণ করেছিলেন, এগিয়ে যেতে শরীর নয়, ইচ্ছার দৃঢ়তাই মুখ্য।

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার মেয়ে ফাল্গুনী সাহার এই সাফল্য তখন ছাপা হয় দেশের বিভিন্ন পত্রিকায়। খবর পড়ে ঢাকার ট্রাস্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে ফাল্গনীর সঙ্গে। বিনা বেতন, থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ ট্রাস্ট কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি করানো হয় তাকে। কথা রাখেন ফাল্গুনী। দুই বছর পর এইচএসসিতে আবারও জিপিএ-৫ পান। এখানেই শেষ নয়। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে। সেই সঙ্গে ব্রাক ব্যাংক–প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি নেন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকে। এবার বিয়ে করে তিনি শুরু করেছেন নতুন জীবন।

বরিশাল নগরের ঐতিহ্যবাহী শংকর মঠে গত বুধবার রাতে ফাল্গুনী আর সুব্রত মিত্রের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। তাঁদের এই পরিণয় সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর উদাহরণ হয়ে থাকবে উল্লেখ করে অদম্য ফাল্গুনী সাহা বলেন, ২০০২ সালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাত দুটি কেটে ফেলতে হয় তাঁর। তবে নিজেকে কখনো দুর্বল ভাবেননি। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তারপর চাকরিজীবন। এখন নতুন করে শুরু করলেন দাম্পত্যজীবন।

দৃষ্টিভঙ্গি আর মানসিকতা ঠিক থাকলে প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয় উল্লেখ করে ফাল্গুনী সাহা বলেন, ‘আমি এটাকে মোকাবিলা করেই এগিয়ে গেছি। এই উদাহরণ ও অদম্য ইচ্ছা আমাদের দাম্পত্যজীবনকে সফল করবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।’
গলাচিপা শহরের বটতলা এলাকার মুদিদোকানি জগদীশ চন্দ্র সাহা ও ভারতী রানী সাহার চার ছেলেমেয়ে—পিন্টু, রঞ্জন, ফাল্গুনী ও অর্ক। এর মধ্যে ফাল্গুনী তৃতীয়।

সাত বছর বয়সে ফাল্গুনী যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়েন, তখন পাশের বাড়ির একটি ভবনের ছাদে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিলেন। হঠাৎ বিদ্যুতের তারের সঙ্গে জড়িয়ে গুরুতর আহত হন ফাল্গুনী। এতে প্রায় কনুই পর্যন্ত পুড়ে যায় তাঁর। প্রথমে এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কয়েক দিন যাওয়ার পর দেখা যায়, তার বাঁ হাতের দুটি আঙুলে পচন ধরে তা খসে পড়েছে। তখন উন্নত চিকিৎসা করানোর মতো তাঁর বাবার সামর্থ্য ছিল না। পরে এলাকার লোকজনের আর্থিক সাহায্য নিয়ে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা ক্যানসারের আশঙ্কায় ফাল্গুনীর দুই হাতের প্রায় কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলেন।

রেললাইনে ফাল্গুনী সাহা

একদিন ফাল্গুনীর দুই হাতের ঘা শুকিয়েছে মাত্র, জেঠার দোকানে বসে দুই হাতে কলম চেপে একখণ্ড কাগজে লেখার চেষ্টা করেন তিনি। জেঠা দেখলেন, ফাল্গুনী লিখতে পারছেন। পরে তাঁকে আবার স্কুলে পাঠানো হলো। কোনো বিরতি ছাড়াই লেখাপড়া চালিয়ে গেলেন ফাল্গুনী।

ফাল্গুনী সাহার বাবা জগদীশ চন্দ্র সাহা একটি মুদিদোকান চালাতেন। তিনি মারা যান ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। মা ভারতী রানী সাহা মিষ্টির প্যাকেট বিক্রি করে সামান্য আয় করতেন। ভয়ংকর জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফাল্গুনীকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। বুধবার রাতে বরিশাল নগরের ঐতিহ্যবাহী শংকর মঠ মন্দিরে সাতপাকে গাঁট বেঁধেছেন ফাল্গুনী। এবার থিতু হবেন সংসারে।

Also Read: ফাল্গুনীর যুদ্ধজয়

বর সুব্রত মিত্রের বাড়িও একই এলাকায়। তিনি বেসরকারি সংস্থা কোডেকের মাঠ কর্মকর্তা। আর ফাল্গুনী ব্র্যাকের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের মানবসম্পদ কর্মকর্তা। ছোটবেলা থেকে দুজনের পরিচয়, তবে প্রেমের সম্পর্ক পাঁচ বছরের। শেষ পর্যন্ত হলো পরিণয়।

সুব্রত মিত্র বলেন, ‘ফাল্গুনীকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। ও যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত, তখন ওর সঙ্গে আমার ফেসবুকে আলাপ হত। তবে কোনো সম্পর্কে জড়ানোর মানসিকতা ছিল না। আমার কাছে ওর হাত না থাকাটা কোনো সমস্যা মনে হয়নি। একটা মানুষের হাত না থাকায় সে বিয়ে করতে পারবে না, এটা তো হতে পারে না।’ সুব্রত আরও বলেন, ‘আমি ওকে স্বপ্ন দেখাই, ওকে ভালোবাসতে শেখাই। বিয়ে করার সিদ্ধান্ত জানাই। অবশেষে আমরা বিয়েও করলাম। আমাদের জন্য সবাই আশীর্বাদ করবেন।’

শংকর মঠের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব কর্মকার বলেন, ‘এ বিয়ে আমার কাছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা মনে হয়েছে। আমি অভিভূত হয়েছি এমন ভালোবাসায়।’