Thank you for trying Sticky AMP!!

‘বীজে ভেজাল’, গজায় না চারা

কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে কেনা পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ বীজ নতুন মোড়কে বাজারজাত করা হচ্ছে। সে বীজ থেকে চারা গজাচ্ছে না।

খুলনা জেলার ম্যাপ

খুলনার বটিয়াঘাটা সদর ইউনিয়নের বলাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি মণ্ডল নিজের এক বিঘা মাছের ঘেরের চারপাশে সবজির বীজতলা তৈরি করেছেন। তাতে আছে ওলকপি, ফুলকপি ও টমেটোর বীজ। কিন্তু বীজতলার চারা রোপণ করতে পারেননি তিনি। কারণ, বাজার থেকে কেনা যে বীজ দিয়ে বীজতলা করেছিলেন, সেখানে খুব অল্প পরিমাণে চারা গজিয়েছে। সেগুলোও বেশ দুর্বল।

অঞ্জলি মণ্ডল বলেন, আগাম চারা দিয়ে মৌসুমের শুরুতে ফলন তুলতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যায়। এ কারণে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সবজির বীজতলা করেন। বাজার থেকে ভালো কোম্পানির বীজই কিনেছিলেন। কিন্তু ওই বীজ থেকে চারা গজায়নি।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক এ ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আর এই উপজেলার কৃষকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লোকজ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫০ জন কৃষক এরই মধ্যে তাঁদের কাছে বীজ নিয়ে সরাসরি অভিযোগ করেছেন। লোকজের সমন্বয়কারী পলাশ দাস মনে করছেন, পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ বীজ নতুন মোড়কে বাজারজাত করায় সে বীজ কিনে কৃষকদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।

উপজেলার কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল বীজে স্থানীয় বাজার ছেয়ে গেছে। স্থানীয় পর্যায় থেকে বীজ সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন নামীদামি কোম্পানির নামে মোড়কজাত করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। অন্যদিকে উচ্চফলনশীল (হাইব্রিড) বলা হলেও ফলন কম হয়। অন্যান্য বছরও কৃষকেরা এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে এবার ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।

বটিয়াঘাটা উপজেলার একটি বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার কৃষিকাজের বেশির ভাগই নিয়ন্ত্রণ করেন নারীরা। সদর ইউনিয়নের ধলাবুনিয়া গ্রামের নীলিমা মণ্ডলও বীজ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনিও আগে সবজি পাওয়ার আশায় বীজতলা করেছিলেন। এক হাজারেরও বেশি বীজের মধ্যে তাঁর বীজতলায় চারা গজিয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০টি।

নীলিমা মণ্ডল বলেন, বাজার থেকে চারা কিনলে তা মনের মতো হয় না। এতে বীজতলায় চারা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বীজতলার চারা দেখে হতাশ হয়ে আগের মতো বাজার থেকে চারা কিনে রোপণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ব্রি-২৩ নিয়েও অভিযোগ

বাটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের হাজরাতলা বিলে ১ একরের মতো জমিতে ব্রি-২৩ জাতের ধান লাগিয়েছেন কৃষক অমর রায়। তাঁর ওই জমিতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু কিছু গাছ থেকে কেবল শিষ বের হচ্ছে, আবার কিছু কিছু গাছের ধান পেকে যাওয়ার উপক্রম। গাছগুলোও বিলের অন্যান্য ধানের চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল।

অমর রায় বলেন, বটিয়াঘাটার মাটির প্রকৃতি ও আবহাওয়ার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়ায় ওই এলাকায় ব্রি-২৩ জাতের ধানের উৎপাদন বেশ ভালো হয়। এতে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই জাতের ধান লাগাচ্ছেন তিনি। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বীজ না পাওয়ায় বাজার থেকে অন্য কোম্পানির বীজ সংগ্রহ করেছিলেন। বীজে ভেজাল থাকার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, সবজির বীজের ব্যাপারে তাঁদের কাছে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। তবে ব্রি-২৩ জাতের ধান নিয়ে অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মৌসুমে কারেন্ট পোকার আক্রমণের কারণে বীজের এমন অবস্থা হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।