Thank you for trying Sticky AMP!!

শরতে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। বিলে আসন পেতেছে জলপদ্ম। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রামের জলাশয়ে ফুটেছে গোলাপি, সাদা ও হলুদ তিন রঙের পদ্ম। এ নিয়ে ইউনেসকোর অর্থায়নে শুরু হয়েছে গবেষণা। বুধবার সকালে

বুড়িচংয়ের দক্ষিণগ্রামের জলাশয়ের সেই পদ্মফুল নিয়ে গবেষণা শুরু

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণগ্রাম জলাশয়ে ফোটা গোলাপি, সাদা ও হলুদ—এই তিন রঙের পদ্মফুল নিয়ে ইউনেসকোর অর্থায়নে গবেষণা শুরু হয়েছে। পদ্মফুল নিয়ে গবেষণা করা রাজধানীর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওই গবেষণা পরিচালনা করছে।

ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ওই জলাশয়ের কিনারায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। এই সময়ে সেখানে নৌকা নিয়ে কেউ পদ্মফুল ছিঁড়তে পারবে না। জলাশয়ে গিয়ে মাছও আহরণ করতে পারবে না। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে কুমিল্লার পরিবেশবাদী সংগঠন ও পরিবেশবিদেরা।

২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘জলাশয়ে তিন রঙের পদ্ম’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর পদ্মফুল নিয়ে গবেষণা করা নানা প্রতিষ্ঠান সেই পদ্মবিলে যায়। এরপর তারা ওই জলাশয়ের পদ্মফুল সংরক্ষণ করার ওপর তাগিদ দেয়।

বর্ষা মৌসুমে পদ্মের ফুল ফোটা শুরু হয়। শরতে অধিক পরিমাণে ফোটে। হেমন্তকাল পর্যন্ত ফুটতেই থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে পদ্মফুলের বৈচিত্র্য, গুণাগুণ ও সংরক্ষণ দিয়ে গবেষণা করে আসছে বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ৩০ থেকে ৩৫টি বিলে পদ্মফুলের সন্ধান পায়। এরই মধ্যে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের দক্ষিণগ্রাম জলাশয়েই একমাত্র তিন ধরনের পদ্মফুলের সন্ধান মিলেছে। ওই কারণে এখানে গবেষণা করার জন্য ২০১৯ সালেই ইউনেসকোতে আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চলতি বছরে ওই গবেষণা কাজ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয় ইউনেসকো। আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ওই গবেষণার কাজ চলবে।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রামের জলাশয়ে ফুটেছে সাদা পদ্ম। দর্শনার্থীরা তা দেখতে আসছেন। বুধবার সকালে

গত সপ্তাহে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সিকদার আবুল কাশেম সামসুদ্দিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাখ হরি সরকার দক্ষিণগ্রাম জলাশয়ে যান। এরপর তাঁরা সেখানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। তাঁদের এই কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও বুড়িচং উপজেলা প্রশাসন।

রাখ হরি সরকার বলেন, ‘পদ্মফুলের আদিনিবাস দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশ। কুমিল্লার বুড়িচংয়ের জলাশয়ের পদ্মফুল আমরা সংরক্ষণ করে বীজ নিতে চাই। এখানে হলুদ পদ্মফুল ফোটে। এটি সচরাচর অন্য কোনো বিলে মেলে না। এক জলাশয়ে তিন ধরনের পদ্মফুল পাওয়াও কঠিন। প্রথম আলোর প্রতিবেদনের পর বিষয়টি আমরা জানতে পারি।’

বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক সিকদার আবুল কাশেম সামসুদ্দিন বলেন, ‘প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর প্রায় দুই বছর ধরে এখানে গবেষণা করার তাগিদ অনুভব করি। এরপর ইউনেসকোতে প্রস্তাব দিই। ওরা সাড়া দেয়। এখন গবেষণা শুরু হয়েছে।’

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রামের জলাশয়ে গোলাপি পদ্ম। বুধবার সকালে

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রাম জলাশয়ের পদ্মবিলে নৌকা চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এক ফসলি জমির মালিক ও কৃষকদের আগামী সপ্তাহে ডেকেছি। জমির মালিকদের কাছ থেকে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত জলাশয় চাওয়া হবে। তাঁদের আমরা প্রণোদনা দেব। ওই সময়ে পদ্মের বীজ সংগ্রহ করা হবে। বীজ থেকে পদ্মফুল ভালো হয়। কাণ্ড থেকে কম হয়। আমরা গবেষণা দলকে সহযোগিতা করছি। এটি ভালো উদ্যোগ।’

পদ্মফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera. এই ফুল ফোটে রাতে। ভোর ও সকালের পর রোদের প্রখরতা বৃদ্ধির আগপর্যন্ত প্রস্ফুটিত থাকে। বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটা শুরু হয়। শরতে অধিক পরিমাণে ফোটে। হেমন্তকাল পর্যন্ত ফুটতেই থাকে। এই ফুল মানবদেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে বেশ উপকারী।

গত বুধবার দুপুরে সরেজিমেন দেখা গেছে, দক্ষিণগ্রাম এলাকার অন্তত ১০ একর জায়গা নিয়ে বিস্তীর্ণ জলাশয়ে পদ্মফুল ফুটে আছে। প্রকৃতির আপন খেয়ালে ওই জলাশয়ে এই ফুলের জন্ম। অন্যবারের তুলনায় এবার কম ফুল ফুটেছে। পদ্মফুল বেড়ে উঠছে, আর দখিনা বাতাসের সঙ্গে দোল খাচ্ছে পুরো জলাশয়ে। পদ্মফুলের ওপর ওড়াউড়ি করছে নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওই জলাশয়ে এক ফসল হয়। তার চেয়ে পদ্মফুল থাকলে আরও সুন্দর হয়। গবেষণা দলকে এলাকাবাসীর সহযোগিতা করা দরকার। পদ্মফুল দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি করেছে। এটি সংরক্ষণ করা হোক।