বৃষ্টির পানিতে এমন দশা রংপুরের মানুষ আগে কখনো দেখেননি
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার রাত ১১টা থেকে রোববার সকাল সাতটা পর্যন্ত আট ঘণ্টায় ৪৪৯ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় ২৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিল।
এক রাতের প্রবল বর্ষণে রংপুর নগরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা এখন পানিতে নিমজ্জিত। কোথাও এক বুক পানি, কোথাও কোমরসমান, আবার কোথাও হাঁটু পানি। নগরের হাজার হাজার বাড়ির নিচতলা এবং মহাসড়ক ও সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে আছে। বৃষ্টির পানিতে এমন অবস্থা এর আগে রংপুরের মানুষ কখনো দেখেননি বলে লোকজনের মন্তব্য।
এমনিতেই রংপুরে গত চার দিন থেকে হালকা বৃষ্টি ঝরছিল। কিন্তু শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার সকাল সাতটা পর্যন্ত টানা প্রবল বর্ষণে নগরের প্রতিটি এলাকা পানিতে ডুবে যায়। দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। পানি জমে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার রাত ১১টা থেকে রোববার সকাল সাতটা পর্যন্ত আট ঘণ্টায় ৪৪৯ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় ২৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিল।
মহাসড়কসহ প্রতিটি সড়ক ও ফুটপাতের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় নর্দমাও উপচে গেছে। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোদমে ভেঙে পড়েছে। এসব পানি সরে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের শ্যামাসুন্দরী খাল পানিতে উপচে পড়ে রাস্তার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। নগরের চেকপোস্ট থেকে টার্মিনাল হয়ে মহাসড়ক পানিতে নিমজ্জিত। নগরের মুন্সিপাড়া,জলকর, হনুমানতলা, নিউ জুম্মাপাড়া, বাস টার্মিনাল, পর্যটন পাড়া, তাজহাট, বাবুপাড়া, কামারপাড়া, মুলাটোল, বাবু খা, হাবিবনগর, কেরানীপাড়া, ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির পেছন, নীলকণ্ঠ, ধাপ হাজীপাড়া, আমাশু, কুকরুল, জুম্মাপাড়া, মুলাটোল, সর্দারপাড়া, সিওবাজার, গণেশপুর, মিস্ত্রিপাড়াসহ নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে আছেন হাজার হাজার পরিবার। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামাসুন্দরী খাল পানিতে উপচে পড়েছে। প্রতিটি নর্দমার সংযোগ খালের মুখে পানিতে থই থই করছে। বিভিন্ন জায়গাতে পলিথিন, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ আর কচুরিপানার কারণে শ্যামা সুন্দরীতে পানি প্রবাহ বিঘ্ন হচ্ছে।
নগরের মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা বিজলি বেগমের বাড়িতে এক বুক পানি। তিনি তাঁর বৃদ্ধা মাকে কোনোরকমে তাঁর বোনের ভাড়া বাসার দোতলায় নিয়ে যান। তিনি বলেন, তিনি তাঁর ৪০ বছরের জীবনে এমন পানি কখনো দেখেননি।
কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরহাদুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে এক কোমর পানি। তাঁর এলাকার একটি সড়কের সেতুর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।’
নগরের প্রতিটি মহল্লার লোকজন নোংরা পানির মধ্য দিয়ে হাঁটাচলা করছেন। মুন্সিপাড়ার একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রায়নানুল হকের তিনতলা ভবনের নিচতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘এত পানি এই শহরে আগে কখনো দেখিনি। এটিই প্রথম আমার বাড়ির নিচতলায় পানি উঠেছে।’
পর্যটন পাড়ায় দেখা গেল, বাড়ির ভেতর-বাহির সবখানে পানি। নর্দমাও উপচে গেছে। মানুষজন নোংরা পানির মধ্যে হাঁটাচলা করছেন। এখানকার মানুষজন জানালেন, এত প্রবল বর্ষণ তাঁরা আর কখনো দেখেননি। বৃষ্টিতে পানি জমে গিয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আফতাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধতায় নাগরিকদের দুরবস্থা দেখা যায়। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে সিটি করপোরেশনকে।
সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, নগরের সবচেয়ে উঁচু জায়গাতেও পানি। এখানে করারই বা কী আছে। শ্যামাসুন্দরী খাল উপচে রাস্তা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উঁচু নর্দমা ও ফুটপাত মহাসড়ক, সড়ক সব তলিয়ে গেছে পানিতে। এরপরও মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।