Thank you for trying Sticky AMP!!

বেড়া, কচুরিপানায় নিস্তেজ ধনাগোদা নদী

চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ধনাগোদা নদীতে বাঁশের বেড়া পেতে মাছ ধরা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার মতলব দক্ষিণের ফেরিঘাট এলাকায়। প্রথম আলো

আইন অমান্য করে চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলায় ধনাগোদা নদীর অর্ধশতাধিক স্থানে আড়াই শতাধিক বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ ধরছেন লোকজন। এসব বেড়ায় দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে কচুরিপানার স্তূপ। এসব কচুরিপানা পচে ও মাছ ধরার বিষটোপে দূষিত হচ্ছে পানি। বেড়ার কারণে পানির প্রবাহ ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আকতার বলেন, ১৯৫০ সালের মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নদীতে বা প্রবহমান স্রোতোধারায় বেড়া, বাঁধ বা অন্য কোনো স্থায়ী-অস্থায়ী স্থাপনা দিয়ে মাছ শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

মতলব সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অশোক কুমার রায় বলেন, বাঁশের বেড়া দিয়ে যেভাবে নদী গ্রাস করা হচ্ছে, তা অপরাধ। নদী হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নদী বাঁচলে মানুষ ও জলজ প্রাণী বাঁচবে। এ কারণে নদীকে রক্ষা করা এবং এর পানি দূষণমুক্ত রাখা সবার দায়িত্ব।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, মতলব দক্ষিণের কাজীরবাজার থেকে নায়েরগাঁও পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর দুই পাশ ও মধ্যে ২৫-৩০টি স্থানে মাছ ধরার জন্য শতাধিক বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কাজীরবাজার এলাকায় একটি, চরমুকুন্দি, বাইশপুর, বিনন্দপুর, সিপাইকান্দি ও ফেরিঘাট এলাকায় ১০টি করে, এনায়েতনগর ও গাজীপুরে ৫টি করে, লক্ষ্মীপুর, মাছুয়াখাল ও নায়েরগাঁওয়ে ২০টি বাঁশের বেড়া রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরমুকুন্দি ও বাইশপুর এলাকার পাঁচ বাসিন্দা বলেন, বাইশপুর এলাকায় অভিনয় দাস, আবুল প্রধানীয়া ও বাবুর আলী এবং চরমুকুন্দি এলাকায় মো. ফরিদ, মো. জয়নাল, মো. ফয়েজ, মো. মেজুসহ আরও কয়েক ব্যক্তি এবং কাজীরবাজার থেকে নায়েরগাঁও পর্যন্ত আরও শতাধিক ব্যক্তি তিন-চার বছর ধরে নদীতে বাঁশের বেড়া পেতে মাছ ধরছেন। দেশি জাতের সব ধরনের মাছ ধরছেন তাঁরা। জেলেরা এসব স্থাপনা এবং এর আশপাশে পানিতে বিষ ঢেলেও মাছ নিধন করছেন। এ বিষে দূষিত হচ্ছে পানি। তাঁরা দাবি করেন, প্রতিটি স্থাপনায় বছরে তিন-চারবার করে মাছ ধরা হচ্ছে। প্রতিবছর এগুলোয় জাল পেতে ১৪-১৫ লাখ টাকার মাছ ধরা হচ্ছে। এসব মাছের অর্ধেকের বেশি পাচ্ছেন স্থাপনার মালিকেরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চরমুকুন্দি এলাকার মো. ফরিদ বলেন, তিনি বাঁশের বেড়া দেননি। তবে অন্যের দেওয়া বেড়ায় দুই বছর ধরে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। বাঁশের বেড়া উচ্ছেদে প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েকবার নোটিশ পেয়েছেন। সময়মতো এগুলো সরাবেন।

বাইশপুর এলাকার অভিনয় দাস, আবুল প্রধানীয়া, বাবুর আলী এবং চরমুকুন্দি এলাকার মো. জয়নাল, মো. ফয়েজ, মো. মেজুসহ আরও কয়েকজন বলেন, প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েই তাঁরা বেড়া দিয়েছেন। এগুলো সরাতে কেউ তাঁদের কিছু বলেননি।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, মতলব উত্তরের ১২ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে প্রায় দেড় শ বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুর্গাপুরে ২৫টি, নন্দলালপুরে ৩২টি, কালীপুরে ২৮টি, কালীরবাজারের ২৬টি ও বেলতলী এলাকায় ৩৫টি বেড়া রয়েছে। এসব বেড়ায় আটকে আছে কচুরিপানার স্তূপ।

মতলব-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী গ্রিন ওয়াটার নামের যাত্রীবাহী লঞ্চের চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ধনাগোদাজুড়ে বেড়া থাকায় লঞ্চ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এসব বেড়ায় প্রায়ই লঞ্চ আটকে যায়। এ ছাড়া কচুরিপানার কারণে পানির প্রবাহ নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। এতে নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে মতলব দক্ষিণের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শহীদুল ইসলাম এবং মতলব উত্তরের ইউএনও শারমিন আক্তার বলেন, ধনাগোদায় স্থাপিত এসব বাঁশের বেড়া সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও অনেকেই সেগুলো সরাননি। এগুলো উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।