Thank you for trying Sticky AMP!!

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সোনারুপা চা-বাগানের ব্যবস্থাপকসহ প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনকে মারধরের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ আজ শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগানটি বন্ধ ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে সাধারণ শ্রমিকেরা সকালে বাগানের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন

ব্যবস্থাপককে মারধরের জেরে জুড়ীতে চা-বাগান বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিকদের বিক্ষোভ

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের সোনারুপা চা-বাগানের ব্যবস্থাপকসহ প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনকে মারধরের জের ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আজ শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান বন্ধ ঘোষণা করেছে। আগাম নোটিশ ছাড়া আকস্মিক এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সাধারণ শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা দ্রুত বাগানটি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল আটটার দিকে কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দল বেঁধে আসা শ্রমিকেরা বাগানের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে তাঁরা বাগান বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন। বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি কানু রুদ্রপাল বলেন, আগাম নোটিশ ছাড়া হঠাৎ করে বাগান বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মারধরের ঘটনায় সাধারণ কোনো শ্রমিক জড়িত নন। এর দায়ও সাধারণ শ্রমিকদের ওপর বর্তায় না। তিনি অবিলম্বে বাগান খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

মারধরের ঘটনায় সাধারণ কোনো শ্রমিক জড়িত নন। এর দায়ও সাধারণ শ্রমিকদের ওপর বর্তায় না। এ কথা জানিয়ে শ্রমিকেরা অবিলম্বে বাগান খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

স্থানীয় পূর্ব জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ব্যবস্থাপককে বাগানে না যেতে বলা হয়েছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তিনি সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়েছেন।

ব্যবস্থাপকসহ অন্যদের মারধর করায় প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
কাজল মাহমুদ, বাগান পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা আকিজ গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক

বাগান কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, সোনারুপা চা-বাগানটি দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান ‘আকিজ গ্রুপ’ পরিচালনা করছে। সোনারুপা ছাড়াও আশপাশে ধামাই ও আতিয়াবাগ নামের আরও দুটি বাগান রয়েছে। সোনারুপায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক নারী-পুরুষ রয়েছেন। প্রতিবছর কর্তৃপক্ষ বাগানের শ্রমিকদের বসতঘর সংস্কার করে দেয়। এ কাজের জন্য সনাতন, নেপাল, ইন্দ্রসহ বাগানের আরও কয়েকজন শ্রমিক আগে কাঠ সরবরাহ করতেন। কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের সাত-আট লাখ টাকার বিলও বকেয়া পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি ঝড়–বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ ঘর মেরামতের উদ্যোগ নেয়। বাগানের ব্যবস্থাপক কাঠ সরবরাহকারী শ্রমিকদের ডেকে এ বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু দর বেশি চাওয়ায় ব্যবস্থাপক তাঁদের কাছ থেকে কাঠ কিনতে রাজি হননি। এ অবস্থায় তিনি বাইরের ঠিকাদারের কাছ থেকে কাঠ কেনার সিদ্ধান্ত নেন।

হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাগান কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দিতে পারে। কিন্তু বাগান বন্ধ করে দেওয়া সমীচীন হয়নি। বাগান খুলে দিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বলেছি।
আল ইমরান রুহুল ইসলাম, জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)

গত মঙ্গলবার একটি গাড়িতে করে সোনারুপা বাগানে কাঠ নিয়ে আসা হচ্ছিল। এ সময় আগের কাঠ সরবরাহকারী শ্রমিকেরা পথে এটিকে আটকান। তাঁরা বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য বাগানের ব্যবস্থাপককে বলেন। পরে এ বিষয়ে আশ্বাস দিলে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন বুধবার বিকেলে ব্যবস্থাপক পুলিশের একটি দল নিয়ে কাঠ সরবরাহকারী কয়েকজন শ্রমিকের বাড়িতে যান। এ সময় তাঁরা বাড়িতে ছিলেন না। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আকিজ গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে যান। তাঁদের উপস্থিতিতে শ্রমিকেরা ব্যবস্থাপকের অপসারণ দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়

শুক্রবার সকালের দিকে ব্যবস্থাপক ঢাকা থেকে আসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে বাগানে ঢুকলে কাঠ সরবরাহকারী শ্রমিকেরা তাঁদের দেখে খেপে যান। তাঁরা ব্যবস্থাপক মালিক নেওয়াজসহ অন্যদের মারধর করেন। আহত ব্যক্তিদের পরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর জের ধরে কর্তৃপক্ষ আজ সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান বন্ধ ঘোষণা করে।

আগাম নোটিশ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান বন্ধে আকস্মিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সাধারণ শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সোনারুপা চা-বাগানে

বাগান পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা আকিজ গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক কাজল মাহমুদ মুঠোফোনে বলেন, ব্যবস্থাপকসহ অন্যদের মারধর করায় প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

ইউএনও আল ইমরান রুহুল ইসলাম বলেন, হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাগান কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দিতে পারে। কিন্তু বাগান বন্ধ করে দেওয়া সমীচীন হয়নি। বাগান খুলে দিতে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বলেছেন।

মারধরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে সনাতন ও নেপালের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। ইন্দ্রের মুঠোফোনের নম্বর সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।