Thank you for trying Sticky AMP!!

ভাঙনের কবলে প্রথম আলো চর

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার প্রথম আলো চরের বিভিন্ন এলাকা। সাম্প্রতিক ছবি। প্রথম আলো

ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে কুড়িগ্রামের প্রথম আলো চরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীভাঙনে গত এক মাসে চরের প্রায় ৫০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ঘাট থেকে দুধকুমার নদের পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, নদ নালায় পরিণত হয়েছে। অসংখ্য নৌকা ঘাটে বাঁধা। নৌকায় প্রথম আলো চরের দক্ষিণ অংশে পৌঁছে চোখে পড়ে ভিন্ন দৃশ্য। পূর্ব দিক থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির স্রোত তীব্র বেগে এসে আধা কিলোমিটার আছড়ে পড়ছে। একই স্থানে উত্তর দিক থেকে গঙ্গাধর নদের স্রোত এসে আঘাত হানছে। দুই নদের মিলিত স্রোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ভাঙতে ভাঙতে দুধকুমার নদ প্রথম আলো চরের বাসিন্দা কৃষক ফজলার রহমানের বাড়ির ২০ ফুট দূরে এসে পৌঁছেছে। এ কারণে তিনি ইতিমধ্যে বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর আগে ভগবতীপুর থেকে প্রথম আলো চরে উঠে আসি। আবার ভাঙনের কবলে পড়লাম। জীবনে এমন ভাঙন দেখি নাই। ব্রহ্মপুত্র নদ ভারত থেকে রলাকাটার চরের পাশ দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। গত বন্যার পর থেকে নদের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় এর স্রোত সোজাসুজি প্রথম আলো চরে আঘাত করছে।

চরের বাসিন্দা হাশেম আলী মুন্সি বলেন, ‘এক মাস আগে বসতভিটা, আবাদি জমি নদে গেইছে। পশ্চিমে কোনো রকমে চালা তুলি আছি। ধারণা করি নাই চরে এমন ভাঙন দেখা দেবে।’ তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘অ্যাত যে ক্ষতি হবার নাগছে, কেউ খোঁজ নিবার আসে নাই।’

একসময় বিভিন্ন চরে গান গেয়ে বেড়াতেন কলিমুদ্দিন। এ কারণে শতাধিক চরের মানুষ তাঁকে কলিমুদ্দিন গীতাল বলে ডাকেন। গান গেয়ে যা উপার্জন করেছিলেন, তা দিয়ে প্রথম আলো চরে বসতভিটা গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই বসতভিটা সম্প্রতি ভাঙনের কবলে পড়লে তিনি সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, ‘অ্যাত যে আমাগেরে কষ্টগো বাবা বুঝাইতে পারুম না। বয়স হইছে চোখে দেখি না। গান গাওয়া বন্ধ কইরা দিছি। কামাই নাই। বাড়িঘর সরাইয়া অন্য জাগাত উঠছি। চলতে পারি না।’

ভাঙনে প্রথম আলো চরের হুজুর আলী, আসাদ উল্ল্যা, গোলজার হোসেন, আবদুল করিমসহ অর্ধশত পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে।

ভাঙনের বিষয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকার অবস্থা তিনি জানেন। বিষয়টি তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানাবেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ বলেন, ‘আমি খুব তাড়াতাড়ি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করব। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের সহায়তা করা হবে।’

প্রথম আলোর চরে ভাঙনের বিষয়ে পাউবোর কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ‘এলাকাটি পরিদর্শন করে বলতে পারব কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন হবে।’