Thank you for trying Sticky AMP!!

ভাঙনের হুমকিতে বসতবাড়ি, বাজার

ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী এই মোল্লার হাটবাজার

শুষ্ক মৌসুমে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে গত এক মাসে অর্ধশতাধিক বসতভিটা, ফসলি জমি, গাছপালা নদে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়িসহ ঐতিহ্যবাহী মোল্লার হাটবাজার।  

গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদের উত্তর দিক থেকে স্রোত এসে দক্ষিণে এক কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। নদের পাশে পুরোনো মোল্লারহাট বাজার। এ হাটে সপ্তাহে দুদিন বসে। শতাধিক চরের লক্ষাধিক মানুষ নৌকা নিয়ে হাটে আসে উৎপাদিত ফসল বিক্রি ও প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে। হাটের পূর্ব দিকের অংশে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে মোল্লারহাটটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া নদের তীরবর্তী বসতভিটা ভেঙে যাচ্ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পাড়ের অধিবাসীরা। ভাঙনের শিকার ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা নদের পাড়ে ছাপরা তুলে কোনো রকমে ঠাঁই নিয়ে আছে।

নদের তীরে ঠাঁই নিয়েছেন উত্তর বালাডোবা গ্রামের ইব্রাহিম শেখ ও তাঁর পরিবার। বালুর মধ্যে পাটখড়ি, পলিথিন, বস্তা ও কাঁথা দিয়ে তৈরি ১২–১৪ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ঝুপড়ি। পরিবারের সদস্যরা মাটিতে কাঁথা বিছিয়ে থাকে। ইব্রাহিমের স্ত্রী ছালেহা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী চর থাকি খড়ি আনি বাজারোত বিক্রি করে। সেই দিয়া আমরা চলি। পরিবারে তিন ছেলে, দুই মেয়ে। এর মধ্যে এক মেয়ের বিয়া দিছি। ছাওয়া দুইটা বিয়া করি চলি গেইছে। বাড়িভিটা নদীত গেইছে। জাগাজমি নাই। পারোত ছাপরা তুলি আছি। এর মধ্যে বড় মেয়ে মর্জিনা বেগম। মাসখানেক হলো সন্তান নিয়ে এখানে আসি থাকে। স্বামীর সাথে ঝগড়া হইছে। হামরায় চলবার পাই না, তার মধ্যে বেটির এ অবস্থা।’

ছামাদ ও জহুর আলী নামের দুই বাসিন্দা বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগত বাড়ি ভিটা ভাঙছে। জায়গাজমি নাই। মাইনষের জাগাত কোনোমতে পড়ি আছি।’

বসতভিটা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে নিচ্ছেন সোনাভান বিবি ও ছালেহা বেগম। তাঁরা বলেন, ‘এত যে বাড়িঘর ভাঙবার নাগছে, কাঁয় হামার খবর নেয়? হামরা গরিব মানুষ, স্বামী দিনমজুর। কামাই করবে না বাড়িঘর সরাইবে। কোটে আশ্রয় নেমো, সেই চিন্তায় আছি।’

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মহু বাদশা বলেন, ‘গত কয়েক বছরের ভাঙনে ৬ নম্বর ওয়ার্ড নদে বিলীন হয়া গেইছে। এই ওয়ার্ডের মানুষ এখন ৪ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আশ্রয় নিয়েছে। চলতি বছর নদীভাঙনে গৃহহীন হয়েছে দুটি ওয়ার্ডের সাত শতাধিক পরিবার। গত ১৫ দিনে ভেঙেছে ৬০টির মতো বাড়ি। ভাঙনের মুখে রয়েছে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ আবাদি জমি। কেউ কেউ জায়গা না পেয়ে নদীর তীরে ছাপরা তুলে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।’

৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামাল মণ্ডল বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী মোল্লারহাট রয়েছে ভাঙনের মুখে। চরাঞ্চলের মানুষের কেনাবেচার জন্য প্রয়োজনীয় এ হাট রক্ষায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালি করেও প্রতিকার মিলছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে পাঁচ শতাধিক জিও ব্যাগ দেওয়া হলেও তা কাজে আসছে না। জিও ব্যাগ নয়, স্থায়ী ভাঙন রোধে সিসি ব্লক ফেলার দাবি এলাকাবাসীর।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ বলে, জেলার ওপর দিয়ে ১৬টি নদ–নদী প্রবাহিত। গত পাঁচ বছরে জেলার ৯টি উপজেলায় নদ-নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২১ হাজার ১৭৪টি পরিবার। এর মধ্যে ভূরুঙ্গামারীতে ৬০৯টি, নাগেশ্বরীতে ২ হাজার ৪২৬টি, ফুলবাড়ীতে ১৮৮টি, সদরের ১ হাজার ৮২১টি, রাজারহাটের ৪৩৯টি, উলিপুরের ৫ হাজার ৯০৪টি, চিলমারীর ৪ হাজার ৫১৯টি, রৌমারীর ২ হাজার ১৮৩টি এবং রাজীবপুরের ৩ হাজার ৮৫টি পরিবার রয়েছে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শুষ্ক সময়েও মোল্লারহাটে নদীভাঙন রয়েছে। এরই মধ্যে আমরা ভাঙন রোধে কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের প্রস্তুতি নিয়েছি। স্থায়ীভাবে এটা রোধ করতে বাজেট চেয়ে প্রকল্প পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে স্থায়ীভাবে কাজ শুরু করতে পারব এবং ভাঙনরোধ করা সম্ভব হবে।’