Thank you for trying Sticky AMP!!

‘ভাড়া তিন গুণ হলেও ঈদে বাড়ি যাচ্ছি, এতেই সুখ’

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই গাদাগাদি করে বেশি ভাড়ায় মাইক্রোবাসে করে গন্তব্যে ছুটছেন অনেকে। আজ রোববার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে

ঘড়ির কাঁটায় রোববার ভোররাত ৪টা ৫০ মিনিট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে দেখা গেল, সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে চলছে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহন ও মাইক্রোবাস।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, দেশের সব সড়ক-মহাসড়কে দূরপাল্লার পথে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ। সরকারের এ সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করার জন্য পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ ভোররাত ৪টা ১০ মিনিট থেকে সকাল ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত শিমরাইল মোড় থেকে মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা পর্যন্ত মহাসড়কের ১৬ কিলোমিটার এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদে ঘরমুখী মানুষ বাস, মালবাহী ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাসে করে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী পরিবহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ফেনীগামী নিউ সখী নামের যাত্রীবাহী একটি বাসের চালক আলী আকবর বলেন, ‘সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও পেটের দায়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সিগন্যাল দিলে তাদের বকশিশ দিয়ে চলে যাব। যেহেতু ভোরবেলা, এ সময় বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না।’

ঢাকা-সিলেট পথে চলাচলরত কেন্দুয়া ও নান্দাইলগামী শাহ সুলতান পরিবহন নামের যাত্রীবাহী একটি বাসের সামনে-পেছনে নম্বর সাঁটানো জায়গায় দেখা যায় আলতোভাবে নম্বর মুছে ফেলা হয়েছে। নম্বর মুছে বাসটি ডেকে ডেকে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে স্থানে যাচ্ছে। বাসটির চালকের সহকারী আলাউদ্দিন বলেন, ‘গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কি না আমাদের জানা নেই। বাড়িতে ছেলেমেয়েরা না খেয়ে আছে। ছেলেমেয়েদের ঈদের পোশাক ও খাবার কেনার জন্য রাস্তায় বের হয়েছি। দয়া করে আমাদের কোনো ক্ষতি কইরেন না।’

কিশোরগঞ্জের ভৈরবগামী একটি বাসের যাত্রী সাহেদ আলী বলেন, ‘স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে মা–বাবার সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়ি যাচ্ছি। ভাড়া তিন গুণ হলেও ঈদে বাড়ি যাচ্ছি, এতেই সুখ।’

কুমিল্লাগামী একটি বাসের যাত্রী তৈয়ব আলী বলেন, ‘আমি পরিবারের সব সদস্য নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। দ্রুত বাড়ি পৌঁছানোর জন্য ভোররাতকে বেছে নিয়েছি।’

শিমরাইল মোড়ে দেখা গেল মাইক্রোবাসের চালকদের দাপট সবচেয়ে বেশি। ভোররাত থেকে কমপক্ষে ৫০টি মাইক্রোবাস এই স্টেশন থেকে ডেকে ডেকে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে।

মাইক্রোবাসে যাত্রী হয়ে না ওঠার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ও সোনারগাঁ থানার পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছে। মাইকিং করে ব্যাপক প্রচার চালিয়েও কোনো লাভ হয়নি। কোনো যাত্রীই পুলিশের নির্দেশনা মানছে না।

মেঘনা সেতুর টোল আদায়ের সঙ্গে জড়িত একজন কর্মী বলেন, রাত ১২টার পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বেড়েছে।

বাড়তি ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাসে করে অনেকে বাড়ি ফিরছেন

এদিকে গণপরিবহন ও মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে মানুষ চলাচল করলেও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে খুব কম। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের কোনো সদস্যকে মহাসড়কে টহলরত অবস্থায় দেখা যায়নি। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) কল করলে তিনি তা রিসিভ করেননি।

সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু গণপরিবহন চলাচল করতে পারে। আমি মাইক্রোবাসে না চলার জন্য মানুষকে সচেতন করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা শেয়ার করেছি। মাইকিং করেছি। তারপরও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না।’

সরকার সর্বশেষ দফায় ৬ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত জেলার ভেতর গণপরিবহন চলার সুযোগ দিয়ে শিথিলতা আনলেও দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি দেয়নি।