Thank you for trying Sticky AMP!!

ভাড়া 'বেশি', বছরজুড়ে ফাঁকা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

গেন্ডারিয়ায় জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ছবি: প্রথম আলো

পুরান ঢাকাবাসীর সংস্কৃতিচর্চাকে এগিয়ে নিতে প্রায় এক যুগ আগে আধুনিক সুবিধাসহ জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছিল সিটি করপোরেশন। কিন্তু সারা বছরই বহুতল এই কেন্দ্র প্রায় ফাঁকা পড়ে থাকে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে স্থানীয় তরুণ-যুবকদের অংশগ্রহণও খুব একটা নজরে পড়ে না। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভাড়ার পরিমাণ অনেক বেশি। এ কারণে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষে নিয়মিত অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের অভিযোগ, যে উদ্দেশ্যে জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল, অব্যবস্থাপনার কারণে তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটির ভাড়া বেশি হওয়ায় নিয়মিত নাটক পরিবেশন করতে পারছে না স্থানীয় নাট্যসংগঠনগুলো। মাঝেমধ্যে যে কয়েকটি নাটক হয়, তাতেও দর্শকদের সাড়া তেমন একটা পাওয়া যায় না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ডিএসসিসিকে একটি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে ডিএসসিসি বলছে, তারা সম্প্রতি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটিকে নতুন করে সাজিয়েছে। এখন ভাড়া কমানোর সম্ভাবনা নেই।

কে বি রোডের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, ২০০৮ সালে উদ্বোধনের বছরখানেক পর পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হয় কেন্দ্রটিতে। পরে বিভিন্ন সংগঠন ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন বিভিন্ন উৎসবের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করত। ২০১২ সালের পর থেকে দিন দিন এই অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এখন মাসে দু-তিনটির বেশি অনুষ্ঠান সেখানে হয় না।

ডিএসসিসির সমাজকল্যাণ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৩৬ দিন কেন্দ্রটিতে অনুষ্ঠান হয়েছে। আর গত মাসে অনুষ্ঠান হয়েছে মাত্র চারটি।

জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি গেন্ডারিয়ার ৯০ কে বি রোডে। চারতলা ভবনের এই কেন্দ্রের নিচতলায় গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। এক কোণে জহির রায়হান লাইব্রেরি ও আরেক কোণে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা মিলিয়ে প্রায় ৪০০ আসনের মূল মিলনায়তন। গত বুধবার দুপুরে সেটি তালাবদ্ধ দেখা গেছে। চতুর্থ তলায় রয়েছে মহড়ার জন্য বেশ কয়েকটি কক্ষ। মেঝেতে ধুলার স্তর জমেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে যাঁর মতো ঘোরাঘুরি করছেন। প্রধান ফটকের ভেতরে বসে ধূমপান করছেন মহল্লার কয়েকজন তরুণ।

শুক্রবারের জন্য কেন্দ্রটির ভাড়া ১৪ হাজার ৮০০ টাকা এবং অন্যান্য দিন ৯ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে রেখেছে ডিএসসিসি। সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের এই ভাড়ার পরিমাণ অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মঞ্চ শিল্পী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা সালাম খোকন। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষে এত টাকা দিয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ সময় যে শিল্পীরা অভিনয় করেন, তাঁরাই কেন্দ্রভাড়ার খরচ বহন করেন। অর্থসংকটের কারণে আজ এই এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ। সংস্কৃতিচর্চায় উৎসাহ দিতে হলে কেন্দ্রটির ভাড়া কমাতে হবে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির উপসমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালে এই কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েক দফা বিদ্যুৎ ও পানির দাম বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এখন সমন্বয় সভার মাধ্যমে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হবে। কোনোক্রমেই ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই।

জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক অমরেশ মণ্ডল বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে গত ১০ মার্চ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি বন্ধ ছিল। এই সময়ের মধ্যে অকেজো শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ঠিক করা হয়েছে। এখন আর এখানে নাটক বা অনুষ্ঠান করতে সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার মানুষকে সংস্কৃতিপ্রেমী করতে গেন্ডারিয়ায় এই স্থাপনা নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। কিন্তু এখন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এখানে নাটক করে না। অন্যদিকে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় সংগঠনগুলোও অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।