Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোগান্তি সঙ্গী করে পুনর্নির্মাণ

মহাসড়কটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের খোয়ার ওপর দিয়ে ঘড় ঘড় করে চলছে গাড়ি। কোথাও ইট দিয়ে সংস্কার করা মহাসড়কে গাড়ি চলছে হেলেদুলে। আবার কোথাও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে চলছে গাড়ি। সঙ্গে বইছে ধুলোর ঝড়। আর বৃষ্টিতে অল্প অল্প করে জমে থাকছে কাদাপানি। ঝাঁকুনি, ধুলা আর কাদাপানিতে কাহিল হচ্ছে যাত্রী, চালক ও পথচারীরা।

এ চিত্র যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের। মহাসড়কটির প্রায় ৩২ কিলোমিটার জুড়ে ভোগান্তি নিত্যদিনের।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২৬৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭১৫ টাকা ৩৯ পয়সা ব্যয়ে দুটি গুচ্ছে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ৩৮ দশমিক ২০০ কিলোমিটার পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। যশোর শহরের দড়াটানা এলাকা থেকে শুরু হয়ে মহাসড়কটি শেষ হবে বেনাপোল স্থলবন্দরের শূন্যরেখায়। দুটি গুচ্ছে মহাসড়কটির পুনর্নির্মাণকাজ চলছে। প্রথম গুচ্ছে যশোর শহরের দড়াটানা থেকে ঝিকরগাছা উপজেলার মঠবাড়ি এলাকা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার ও দ্বিতীয় গুচ্ছে মঠবাড়ি এলাকা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দরের শূন্যরেখা পর্যন্ত ১৮ দশমিক ২০০ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। মহাসড়কটির বর্তমান প্রস্থ ২৩ দশমিক ৯৫ ফুট থেকে উভয় দিকে বাড়িয়ে কোথাও ৩০ ফুট, আবার কোথাও ৩৪ ফুট করা হচ্ছে। শতবর্ষী গাছ থাকার কারণে কোথাও কোথাও প্রস্থ চার ফুট কমছে। ৩ দশমিক ৬৭ ফুট গর্ত করে তা প্রথমে বালু, পরে বালু ও খোয়া, তারপর পাথর ও বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। শেষে উপরিভাগে বিটুমিনের (পিচ) ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। বিটুমিনের ঢালাইয়ের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ ইঞ্চি। ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর পুনর্নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে, শেষ হবে ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর।

সূত্র জানায়, মহাসড়কটির যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাট থেকে নিমতলা পর্যন্ত চার কিলোমিটার এবং সদর উপজেলার নতুনহাট থেকে ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার অংশে পিচঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। মহাসড়কটির প্রায় ১৪ কিলোমিটার খুঁড়তে বাকি রয়েছে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া থেকে পুলেরহাট পর্যন্ত ২ দশমিক ৯০০ মিটার, ঝিকরগাছা বাজার এলাকায় ৮০০ মিটার এবং শার্শা উপজেলার নাভারণ সেতু থেকে বেনাপোলের বলফিল্ড পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার। বলফিল্ড থেকে বেনাপোল স্থলবন্দরের শূন্যরেখা পর্যন্ত ২ দশমিক ৩৬৫ কিলোমিটার অংশের এক পাশ খোঁড়া হয়েছে। মহাসড়কটির ওই অংশের অপর পাশ এখনো খুঁড়তে বাকি রয়েছে। মহাসড়কটির অবশিষ্ট ১৫ কিলোমিটার অংশে বালু ও পাথর দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এরপর ওই অংশে পিচের ঢালাই দেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের ঝিকরগাছা বাজার এলাকায় প্রায় ২০০ মিটারজুড়ে বিটুমিনের ওপর ইট বিছানো রয়েছে। এতেও মাঝেমধ্যে ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ওই এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে হেলেদুলে। সব সময় ধুলায় আচ্ছন্ন থাকছে গোটা এলাকা। বৃষ্টি হলে গর্তে পানি জমছে। নাভারণ সেতু থেকে বেনাপোলের বলফিল্ড পর্যন্ত ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও যানবাহনের যাত্রী—সবাইকেই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।  চাঁচড়া মোড় এলাকায় মহাসড়কের এক পাশে এক্সকাভেটর দিয়ে খোঁড়ার কাজ চলছে। এ কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

যশোর থেকে বেনাপোলের মধ্যে চলাচলকারী তন্দ্রা পরিবহনের একটি বাসের চালক তপু হোসেন বলেন, মহাসড়কে ছড়িয়ে থাকা পাথরের খোয়া, ইটের জোড়াতালি এবং খোঁড়াখুঁড়ির কারণে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। সময়ও বেশি লাগছে।

ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগর গ্রামের দোকান কর্মচারী ভীম বিশ্বাস বলেন, মহাসড়কের পাশ দিয়ে হাঁটা যায় না। গাড়ি যাওয়ার পর ধুলায় কিছু দেখা যায় না। বৃষ্টি হলে গর্তে পানি জমে যায়। গাড়ি চলাচলের সময় ওই কাদাপানি ছুটে গায়ে লাগে। এতে জামাকাপড় নষ্ট হয়।

সওজ অধিদপ্তর যশোর সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুরুজ মিয়া বলেন, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক পুনর্নির্মাণের কাজ চলমান। সেখানে আপাতত কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে তা সাময়িক। কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। এবার ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তি হবে না।