Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোটের পরিবেশটা কেমন গুমোট হয়ে গেল

সহিংসতার একপর্যয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মোটরসাইকেল

৬১ বছর বয়সী ভোটার অসীম রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তাঁর আঙুলের ছাপটি মেলাতে চেয়েছেন ইভিএম মেশিনে। শেষ পর্যন্ত মেলেনি। ভোটও দিতে পারেননি। ভোটার নম্বর দিলে মনিটরে তাঁর নাম-ছবি ভাসে ঠিকই; কিন্তু আঙুলের ছাপ মেলে না। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম নগরের নন্দনকাননের অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে উপস্থিত ভোটারদের অনেককে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা গেল।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আলী ইমাম নিজেও অনেক চেষ্টা করেছেন অসীম রায়ের ভোটটা  নিতে। কিন্তু কাজ হয়নি। এ রকম অনেক ভোটারকে যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে ভোট গ্রহণের যন্ত্রটি। এত গেল যন্ত্রের যন্ত্রণা। মানুষের যন্ত্রণাও কম নয়।

অসীমের চেয়ে আরেকটু বেশি বয়সের একজন ভোটার ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়েছেন মলিন মুখে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভোটার বললেন, কোথায় কোথায় চাপ দিতে হবে তারা তাঁকে একজন দেখিয়ে দিয়েছে। ভোট তিনি কোথায় দিয়েছেন বুঝতেই পারেননি। ভোটারদের উপস্থিতি তেমন না থাকলেও এই কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে একটি বিশেষ দলের কর্মীদের সক্রিয় দেখা গেছে। সকাল ১০টায় অপর্ণাচরণ মহিলা কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার জানালেন, ভোট দিয়েছেন মোট ৪৭ জন। এই কেন্দ্রে ২ হাজার ১০৬ জন ভোটার।

অপর্ণাচরণের পুরুষ কেন্দ্রে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ২৪৮ জন। এই কেন্দ্রে ভোটারসংখ্যা ২ হাজার ৭০।

ভোটারদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থান

বেলা সাড়ে ১১টায় লাভ লেন ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে দেখা দেখা হলো ৬২ বছর বয়সী ভোটার তপন দাস বর্মণের সঙ্গে। তাঁরও মুখটা মলিন। তাঁকে নাকি বলা হয়েছে, তাঁর ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। কী করে হলো? আঙুলের ছাপ মিলল কী করে। ভোটার নম্বর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ছবি ভেসে ওঠেনি? তপন দাস বর্মণ মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে বললেন, ‘আমিতো আমার ছবি দেখলাম। কিন্তু ভোট তো আগেই দিয়ে ফেলেছি, বলল ওরা।’ এই কেন্দ্রে ভোটার আছে ২ হাজার ৩৪৪। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াস আকতার তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারলেন না এ পর্যন্ত কত ভোট পড়ল।

ঘাটফরহাদবেগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে নয়টায় দেখা হলো বদিউল আলম নামের এক বৃদ্ধ ভোটারের সঙ্গে। তাঁরও মুখটা মলিন। ভোট দিতে গিয়ে তাঁকে একবার চারতলায় আরেকবার নিচতলায় ঘুরতে হয়েছে।

কদম মোবারক মহিলা ভোটকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৭৮ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানালেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অমিত চৌধুরী। এখানে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৮০।

দুপুর ১২টায় জামালখান খাস্তগীর স্কুলের কাছাকাছি লোকজনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখলাম। দূর থেকে কৌতূহলী দৃষ্টি রেখেছে ওই দিকে। জানতে চাইলাম, এখানে কি কিছু হয়েছে? জবাবে একজন বললেন, কী আর হবে? এখানে কি অন্য কোনো পার্টি আছে? তারা নিজেরা নিজেরাই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

ভোটারদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থান

তারা নিজেরা নিজেরা কারা? এই প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। আরেকজন পাল্টা প্রশ্ন করলেন, সবাই জানে, আপনি জানেন না?

বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে পাহাড়তলীতে নির্বাচনী সংঘর্ষে নিহত হওয়ার ঘটনাটি মাঘের শীতল বাতাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে শহরময়। লালখান বাজারের মারামারি খবরও ছড়িয়ে পড়েছে। হুট করে পরিবেশটা কেমন গুমোট হয়ে গেল। আঙুলের ছাপ মিলুক বা না মিলুক, ভোট দিতে পারল কি না, এসব আপাতত দূরে থাক, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কিন্তু পাহারায় রয়েছে পুলিশ আর দলের কর্মীরা। সব মিলিয়ে কী চমৎকার দেখা যাচ্ছে ভোট।