Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোলায় ঝড়ে গাছের ডাল পড়ে একজনের মৃত্যু

ভোলার মনপুরা হাজিরহাট-চর যতিন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে। এতে সাত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকালে

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত ভোলার লক্ষাধিক মানুষ গতকাল মঙ্গলবার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। কয়েকটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। ঝোড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে লালমোহন উপজেলায় আবু তাহের (৪৮) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকসুদুর রহমান মুরাদ এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আবু তাহেরের বাড়ি লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চরকলমি গ্রামের ফরাজিবাজার এলাকায়।

তাহেরের স্বজন ও স্থানীয় লোকজন বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে লালমোহনে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস বইছিল। শৌচাগারে যাওয়ার পথে বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে তাঁর গায়ে পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে পরিবারের লোকজন তাঁকে প্রথমে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তাঁর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠান। এর কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত্যু হয়।

ভোলা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জয়ন্ত সাহা বলেন, আবু তাহেরের ওপর গাছের ডাল পড়লে তাঁর পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়। আর এ কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে গতকাল রাতে জোয়ারের পানি বাড়ায় ভোলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ আতঙ্কে রাত কাটিয়েছে। রাত সাড়ে ১০টায় লালমোহন উপজেলার চরশাহাজালালের জেলে মো. নাসিম (৪২) বলেন, ‘জোয়ারের পানি খাট ছুঁই ছুঁই করতেছে।’ সকালে বললেন, রাতের জোয়ারের পানি নামতে না নামতে আবার সকালে জোয়ারের পানি উঠেছে।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান বলেন, মঙ্গল শিকদার ও লর্ড হার্ডিঞ্জ এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে দুটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে বালুভর্তি বস্তা ফলে সংস্কার করছে। রাতের জোয়ার ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তবে এখন চরবাসী ঝুঁকিমুক্ত। তাদের আর নিরাপদে আসতে হবে বলে মনে হচ্ছে না।
ঢালচর হাওলাদার বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন বলেন, রাতে মাচার ওপর চৌকি তুলে গ্যাসের চুলো বসিয়ে রান্না করে কোনো রকম খিদে মিটিয়েছেন। কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়েছেন। এ ইউনিয়নে কোস্ট ফাউন্ডেশন ও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পাকা ভবন ছাড়া কোনো ভবন নেই। এই দুই ভবনে চার শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বাকি মানুষ ঘরের মাচা ও খাটের ওপর আশ্রয় নিয়ে রাত কাটিয়েছে।

কোস্ট ফাউন্ডেশন ভবনে আশ্রয় নেওয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকর্মী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রাত ও সকালের জোয়ারে ৪ থেকে ৫ হাত পানি উঠেছে। মানুষ রাতে ঘুমাতে পারবে না।’

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. সালাম হাওলাদার বলেন, জোয়ারের তোড়ে ঢালচর ও চরনিজামের কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে গেছে।

দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফারুক দৌলত বলেন, সারা রাত মদনপুরের মানুষ ঘুমাতে পারেনি। অনেকের ঘরে পানি ঢুকেছে। রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। অনেকের মাছের ঘের ডুবে গেছে।

ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নে জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সড়ক ভেঙে পানি ঢুকছে

চরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সফিক মাঝি (৬৫) বলেন, ‘আল্লাহ, আল্লাহ করতে করতে সহিসালামতে সারা রাইত কাটছে। শঙ্কায় ছিলাম।’

এদিকে মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরযতিন ও সোনারচর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে সাত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অলিউল্যাহ কাজল বলেন, তাঁর ইউনিয়নের তিন থেকে চার কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। ইতিমধ্যে ৫০০ বস্তা দিয়ে পানি ঠেকানো চেষ্টা চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে কাজ চলছে।