Thank you for trying Sticky AMP!!

ভ্যানচালকের সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড রাস্তায় রাস্তায়

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ভ্যানচালক আকিমুলের সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড রাস্তায় শোভা যাচ্ছে। ছবিটি গতকাল তালসার সড়কে। প্রথম আলো

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের কুশনা, জালালপুর, তালসারসহ একাধিক রাস্তায় চলার সময় প্রায়ই চোখে পড়ে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড। 

সাইনবোর্ডে কোথাও লেখা আছে, ‘সামনে স্কুল, গতি কমান’। আবার কোথাও লেখা আছে, ‘সামনে বাজার, আস্তে চলুন’। কোথাও লেখা আছে, ‘আপনার শিশুকে স্কুলে পাঠান’, ‘বাল্যবিবাহ বন্ধ করুন’, ‘নিরাপদ সড়ক গড়তে সবাই সচেতন হই’। 

আর এই সাইনবোর্ডগুলো দিয়ে যিনি এলাকার মানুষকে সচেতন করে চলেছেন, তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। আকিমুল ইসলাম ওরফে সাজু (৩০) নামের এই ভ্যানচালক দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে শুধু বেঁচে আছেন, তা–ই নয়, নীরবে সমাজের কাজ করে চলেছেন। অন্যরা গাছে পেরেক ঠুকে নিজেদের প্রচারে যখন ব্যস্ত, আকিমুল তখন গাছের কথা চিন্তা করে বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করছেন। 

সমাজসচেতন আকিমুল উপজেলার তালসার গ্রামের আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়ার ছেলে। আকিমুল বলেন, দারিদ্র্যের কারণে ছোটবেলায় তাঁর পড়ালেখা হয়নি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজে দেওয়া হয়। কালীগঞ্জ শহরের কৌশিক এন্টারপ্রাইজে কাজ করতেন। এরপর একসময় ওই দোকান ছেড়ে বাড়ি ফিরে যান। শুরু করেন ভ্যান চালানো। ১২ বছর তিনি এই ভ্যান চালাচ্ছেন। বর্তমানে তাঁর দিনে আয় গড়ে ৩০০ টাকা। বাবা-মা আর স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। এই আয়ের পাশাপাশি বাবা ওয়াদুদ ভূঁইয়ার একটি চায়ের দোকান আছে। এখনো কষ্ট করেই চলে তাঁদের সংসার। 

আকিমুল বলেন, ২০১৩ সালে কোটচাঁদপুর-তালসার সড়কে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। তানভির আলম নামের এক ব্যক্তির এক সন্তান মারা যান। শিশুটি তখন স্কুলে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিল। একটি দ্রুতগামী মাইক্রোবাস তাকে চাপা দেয়। এটা দেখে তাঁর মনের মধ্যে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। এটা বুঝতে পারেন যে সচেতনতা না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তখন তিনি ভাবতে থাকেন কীভাবে মানুষকে পথচলায় সচেতন করা যায়। সেই ভাবনা থেকে রাস্তার ধারে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড লেখা শুরু করেন।

আকিমুল আরও জানান, এগুলো প্রেস থেকে ছাপিয়ে এনে নিজেই রাস্তার ধারে গেড়ে দেন। নিজে ভ্যান চালিয়ে যা আয় করেন, তার থেকে কিছু পয়সা বাঁচিয়ে এটা করেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে এখন পর্যন্ত নিজ ইউনিয়নের তালসার, জালালপুর, কুশনা সড়কে অর্ধশত সাইনবোর্ড দিয়েছেন। আশা আছে, গোটা উপজেলায় এই সাইনবোর্ড দেওয়ার। এ কাজে তিনি পরিবারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আকিমুলের বাবা আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে চলেন। ছেলে ভ্যান চালিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। এরপরও ছেলে সমাজকে ভালো রাখতে সমাজের মানুষকে সচেতন করতে নানা কাজ করেন। এটা তাঁর কাছে ভালোই লাগে। তবে অনেক সময় সংসারের কষ্টের কথা মনে হলে খারাপ লাগে। 

এ বিষয়ে কুশনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান বলেন, ‘ছেলেটি পেশায় একজন ভ্যানচালক। কিন্তু তার মনটা অনেক বড়। সে নীরবে সমাজের কাজ করে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আকিমুলের মতো সমাজের অন্যরাও সেবামূলক কাজে এগিয়ে এলে একদিন আমাদের এই সমাজ উন্নত সমাজে পরিণত হবে।’