Thank you for trying Sticky AMP!!

মধ্যবিত্তের জন্য ইউএনওর 'ভালোবাসার থলে'

‘স্যার, আমরা তিন দিন ভাত খাই না। মধ্যবিত্ত বলে কাউকে সাহায্যের জন্য বলতেও পারছি না, বোঝাতেও পারছি না। যদি কিছু সাহায্য করেন, অনেক ভালো হয়।’ গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামে হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মাদ রুহুল আমিনের ফেসবুক মেসেঞ্জারে এই খুদে বার্তা পাঠান এক তরুণ। পরদিন তাঁর কাছে পৌঁছে যায় নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভরা ‘ভালোবাসার থলে’। শুধু ওই ব্যক্তি নন, এ রকম ত্রাণসহায়তা পেয়েছে উপজেলার ৭০০ মধ্যবিত্ত পরিবার। তবে রুহুল আমিন এটিকে সহায়তা মানতে নারাজ। তিনি এটিকে বলছেন, ‘সমস্যা ভাগাভাগি করে নেওয়া।’

করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে প্রায় সবকিছু। এতে উচ্চবিত্তের জন্য তেমন সমস্যা হচ্ছে না। নিম্নবিত্তরাও সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণসহায়তা পাচ্ছেন। কিন্তু বিপাকে পড়েছে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার। তাদের জন্যই মূলত এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন ইউএনও।

দুভাবে এই ত্রাণ হস্তান্তর করা হচ্ছে। সাহায্যপ্রার্থীরা চাইলে তাঁদের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ভালোবাসার থলে লেখা–সংবলিত বস্তাবন্দী ত্রাণ। আর যাঁরা এতে বিব্রতবোধ করছেন, তাঁরা চাইলে রাতে ইউএনওর কার্যালয়ে এসে ত্রাণ নিয়ে যেতে পারছেন। গত ২৯ মার্চ থেকে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ শুরু করেন রুহুল আমীন। শনিবার পর্যন্ত ৭০০ পরিবার সহায়তা পেয়েছে।
রুহুল আমিন জানান, বেশির ভাগই তাঁর ফেসবুক মেসেঞ্জারে ত্রাণ সহায়তা চেয়েছেন। আবার কেউ কেউ মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। অনেকে মেইলের মাধ্যমেও সহায়তা চেয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে মুঠোফোনের নম্বর ও বাড়ির ঠিকানা নেওয়া হয়।
এমন উদ্যোগের বিষয়ে রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, এই দুর্যোগে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও কষ্টে আছে। কিন্তু তারা সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী কারও কাছে সহায়তা চাইতে পারছে না। তাদের জন্যই ভিন্নধর্মী এই উদ্যোগ নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসন ও বেশ কিছু সামর্থ্যবান মানুষ এতে সহায়তা করছেন।’
আরও যত উদ্যোগ
এর আগে ৩১ মার্চ সামাজিক দূরত্ব মেনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ হস্তান্তর করেন রুহুল আমিন। খোলা জমিতে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয় ত্রাণের প্যাকেটগুলো। সেখান থেকে একে একে খাদ্যশস্যের প্যাকেট নিয়ে যায় মনাই এবং সোনাই ত্রিপুরাপল্লির ১০৭টি পরিবার। এমন উদ্যোগও সবখানে প্রশংসিত হয়েছিল। আবার গত শুক্রবার থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে উপজেলায় স্কুলমাঠে কাঁচাবাজার বসার উদ্যোগ নেন তিনি।। উপজেলা প্রশাসন এ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথমবারের মতো উপজেলা সদরের পার্বতী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে কাঁচাবাজার বসানো হয়। প্রতিটি দোকান বসানো হয়েছে একটি আরেকটির থেকে কমপক্ষে ১০ ফুট দূরত্বে। দোকানের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্বে সারি মেনে দাঁড়ানোর জন্য বৃত্ত আঁকা হয়েছে। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বাজার চালু থাকবে। শনিবার পর্যন্ত ছয়টি মাঠে ছয়টি বাজার বসেছে।
এ উদ্যোগের বিষয়ে রুহুল আমিন বলেন, ‘হাটহাজারীতে যেসব কাঁচাবাজার আছে, সেগুলোতে গাদাগাদি করে দোকান বসে। লোকজনও গাদাগাদি করে কেনাকাটা করেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি প্রবল হওয়ায় বাজার সাময়িকভাবে সরিয়ে স্কুল মাঠে বসানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’