Thank you for trying Sticky AMP!!

মনিরামপুরে ৫০০ হেক্টরে জলাবদ্ধতা, বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা চাষিদের

মনিরামপুরের দেবীদ্বারপুর খাল দখল করে জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা মাছের চাষ করছেন। এতে কাকোড়িয়া বিলের পানি বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন চাষিরা

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার দেবীদ্বারপুর খালের অন্তত দুই কিলোমিটার দখলে নিয়ে মাছের চাষ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১০ ব্যক্তি। এতে স্থানীয় বিল কাকোড়িয়ার অন্তত ৫০০ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে বৃষ্টির পানিতে বিলের আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বিল থেকে পানি বের করতে না পারলে বোরো ধানও চাষ করা যাবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিলপারের কয়েক হাজার কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
বিলপারের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনিরামপুর উপজেলার ভোজগাতি, কাশিমনগর ও সদর ইউনিয়নের সংযোগস্থল এই বিল। তিন ইউনিয়নের বর্ষার পানি এই বিল দিয়ে দেবীদ্বারপুর খালের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। খালটি চালকিডাঙ্গা থেকে ফতেয়াবাদ-বাকোসপোল হয়ে ভাটিতে হরিহর নদে নেমে গেছে। খালের চালকিডাঙ্গা থেকে ফতেয়াবাদ পর্যন্ত অন্তত দুই কিলোমিটার দখল করে ঘের করা হয়েছে। এই কারণে বিলের অন্তত ৫০০ হেক্টরে বর্ষার পানি আটকে রয়েছে। ওই পানি না সরানো হলে কৃষকেরা এ বছর বিলে বোরো ধানের আবাদ করতে পারবেন না।

চালকিডাঙ্গা গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, ‘ওই বিলে আমার ১০ বিঘা জমি রয়েছে। জমির ধানের ওপর আমরা নির্ভরশীল। আমন ধান আবাদের পর অতিবৃষ্টি শুরু হয়। দেবীদ্বারপুর খাল দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় বৃষ্টির পানি বিল থেকে বের হতে পারেনি। এতে পানিতে তলিয়ে থাকা আমন ধান পচে নষ্ট হয়েছে। এবার বোরো ধান করতে না পারলে না খেয়ে মরতে হবে। এখন ধানের বীজতলা তৈরি করার উপযুক্ত সময় চলছে। কিন্তু বিলে পানি থাকায় তা করতে পারছি না।’
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বিল কাকোড়িয়ায় হেক্টরের পর হেক্টর জমি জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ফতেয়াবাদ পর্যন্ত খালের অস্তিত্ব দেখা গেছে। খালের মুখ দখল করে ১০০ বিঘার একটি ঘের বানিয়ে মাছের চাষ করছেন মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম। এ ছাড়া ওই খাল দখল করে আরও আট–নয়জন মাছ চাষ করছেন। তাই বিলের পানি এই বিল দিয়ে বের হতে পারছে না।

খাল দখল করে মাছ চাষ করার বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, ‘আমি একা তো দখল করিনি, আরও অনেকে করেছে। তবে এ বিষয়ে আমাকে কৃষকদের কেউ কিছু জানাননি। আমি শিগগিরই গিয়ে কীভাবে বিলে এবার বোরো ধানের চাষ করা যায়, তা দেখব।’
এক সপ্তাহের মধ্যে বিলের জলাবদ্ধতা নিরসন করে বোরো ধানের আবাদ নিশ্চিত করার দাবিতে ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি মনিরামপুর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল।
মনিরামপুর ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিব্বুল্লাহ মহিব বলেন, ‘দেবীদ্বারপুর খাল প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় বিল কাকোড়িয়ার আমন ধান নষ্ট হয়েছে। বিলের অন্তত চার হাজার বিঘা জমিতে এবারও বোরো ধান চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এবার বোরো ধান করতে না পারলে এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মানুষের পাশাপাশি পশুখাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দেবে। যে কারণে বিলের পানি সেচ দিয়ে হলেও বোরো ধানের আবাদ নিশ্চিত করার জন্য আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জকির হাসান বলেন, ‘কাকোড়িয়া বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কৃষকদের স্মারকলিপি পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সরেজমিন তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বলেন, ‘আমি সরেজমিনে দেখেছি। খাল দখল করে প্রভাবশালীরা মাছের ঘের তৈরি করেছেন। তা ছাড়া খালের যতটুকু উন্মুক্ত রয়েছে, ততটুকুতেও পলি জমে তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। যে কারণে বিলের পানি নামতে পারছে না। পাঁচটি সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’