Thank you for trying Sticky AMP!!

মাছ-সবজির আড়তে ভিড়, ফাঁকা সড়ক

মাছের আড়তে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করেই চলছে কেনাকাটা। কাজীর বাজার মাছের আড়ত, সিলেট, ১৬ এপ্রিল সকাল

সিলেট নগরের সোবহানীঘাট সবজির আড়তে ভোর থেকে ক্রেতাদের ভিড়। নগরের কাজীর বাজারেও ছিল ক্রেতাদের ভিড়। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকের মুখে নেই কোনো মাস্ক। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকেই। আবার কারও মুখে মাস্ক থাকলেও তা নেই যথাস্থানে।

গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে মাছ-সবজি কিনছেন ক্রেতারা। আড়ত থেকে কেনা সবজি ভ্যানে সাজিয়ে রাখছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যপাশে বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে আনা মালামাল নামাতে ব্যস্ত কয়েকজন শ্রমিক।

তবে নগরের প্রবেশমুখসহ অভ্যন্তরের সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। কিছু সময় পরপর পণ্যবাহী ট্রাক ও কয়েকটি যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। নগরের অভ্যন্তরে চলছে রিকশাও। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ছিল সুনসান নীরবতা। ফাঁকা সড়কের কয়েকটি মোড়ে যাত্রীরা গন্তব্যে বেরিয়ে অপেক্ষা করছেন যানবাহনের।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সারা দেশে আট দিনের লকডাউনের তৃতীয় দিন চলছে। তৃতীয় দিনে শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত নগর ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

সবজির আড়তে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করেই চলছে কেনাকাটা। সোবহানীঘাট সবজি আড়ত, সিলেট, ১৬ এপ্রিল সকাল

শুক্রবার সকালে নগরের মির্জাজাঙ্গাল, রিকাবীবাজার, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ মোড়, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, চণ্ডিপুল, লাউয়াই, পিরোজপুর, কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, কাজীর বাজার, তালতলা, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, সড়কগুলো ফাঁকা। সড়কে কোথাও পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। পুলিশের কোনো সদস্যকেও সড়কে দেখা যায়নি। তবে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে পুলিশের একটি ভ্রাম্যমাণ দল দেখা গেছে। নগরের বন্দরবাজার, কাজীর বাজার ব্রিজ, রেলওয়ে স্টেশন, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে কিছু অটোরিকশাকে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নগরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে যাত্রীদের নামাতে দেখা গেছে এক পুলিশ সদস্যকে। পরে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ দলটি সে স্থান ত্যাগ করার পর ফের অ্যাম্বুলেন্সে করে যাত্রী নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের দিকে রওনা দিতে দেখা গেছে। সে সড়কে আরও তিনটি অটোরিকশাকে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। মোড়ের অন্য পাশে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে বের হওয়া ৮ থেকে ১০ জন যাত্রীর জটলা দেখা গেছে। সেখানে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে যাত্রী পরিবহন করা কয়েকজনকে যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা গেছে।

হুমায়ুন রশীদ চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা আল আমিন বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে মৌলভীবাজার যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছি। তবে কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। মোটরসাইকেলে করে যাত্রী পরিবহন করা এক ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক টাকা চেয়েছেন। এত টাকা সঙ্গে না থাকায় আরও একজন পাওয়া যায় কি না, দেখছি।’ তিনি বলেন, অটোরিকশায়ও একই ভাড়া চেয়েছে। তবে চালক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। পথে পুলিশ যদি নামিয়ে দেয়—এ ভয়ও আছে। তারপরও জরুরি কাজ থাকায় মৌলভীবাজার যেতেই হবে। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক দম্পতি।

লকডাউনের তৃতীয় দিন সিলেট নগরের অধিকাংশ সড়ক ছিল ফাঁকা। কালেক্টরেট মসজিদের সামনে, নগরের বন্দরবাজার, ১৬ এপ্রিল সকাল সাতটা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, সিলেটে চিকিৎসা করাতে এসে এক আত্মীয়ের বাড়িতে লকডাউনে আটকা পড়েছিলাম। তাঁরা থেকে যেতে বলেছেন। তবে অন্যের বাড়িতে এত দিন বসে থাকতে ভালো লাগছে না। আজ শুক্রবার বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছি। এখানে বেশ কিছু সময় ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। প্রাইভেট কার বা অন্য কোনো পরিবহন পাওয়া গেলে সেটি দিয়েই বাড়ি ফিরে যাব।

অন্যদিকে সিলেট নগরের রেলস্টেশন এলাকায় ছয়টি অটোরিকশা সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন চালকেরা। তাঁদের মধ্যে আমজাদ মিয়া নামের এক চালক বলেন, সড়কে দাঁড়িয়ে থাকলে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়। এ জন্য স্টেশনের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি বলেন, ‘যাত্রী পরিবহন না করলে ঘরে বাজার থাকে না। দৈনিক যা আয় করি, তার থেকে গাড়ি মালিককে দিয়ে যা থাকে, সেটি দিয়েই সংসার চলে। এর থেকে বাড়তি টাকা সঞ্চয় করা যায় না। লকডাউন হলেও আমাদের বাইরে বের হতেই হয়। আগে প্রতিদিন অটোরিকশার মালিকের ভাড়া দেওয়ার পর হাতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা থাকলেও এখন ২০০ থেকে ৩০০-র অধিক থাকছে না।

তবে যাত্রীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা বলছেন, লকডাউনের সুযোগে অটোরিকশার চালকেরা অধিক ভাড়া আদায় করছেন। কিন্তু তাঁরা আগের মতোই যাত্রী পরিবহন করছেন। তারপরও বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

এদিকে নগরের কাজীর বাজার মাছের আড়তে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। আড়তে পাইকারি ক্রেতাদের মাছ কিনতে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে দরদাম করতে দেখা গেছে। ভিড়ের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের মুখেই ছিল না মাস্ক। অন্যদিকে ট্রাক থেকে মাছ নামানো ও ধোয়ামোছার কাজও চলছিল।

আড়তে মাছ কিনতে আসা মকবুল হোসেন বলেন, আড়তে ঢুকলে করোনার কথা ভুলে যেতে হয়। এখানে কোনো করোনা নেই! এত ভয় নিয়ে জীবনে চলা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আড়তের ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আড়ত থেকে মাছ কিনে খুচরা বিক্রি করেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ অন্য বাজারে নিয়ে যান। প্রতিদিন সকালে আড়তে ভিড় থাকে। আড়তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব না।

এদিকে নগরের সোবহানীঘাট ট্রেড সেন্টার সবজি আড়তেও একই চিত্র দেখা গেছে। পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে ভ্যানে করে বিক্রি করা হোসেন আহমদ বলেন, আড়তে লকডাউন বা সাধারণ দিনেও একই রকম ভিড় থাকে। তবে লকডাউনে সাধারণ দিনের তুলনায় সবজির দাম বাড়তি থাকে, এটিই সাধারণ দিনের সঙ্গে তফাৎ। এ ছাড়া আর কোনো তফাৎ নেই। তিনি আরও বলেন, সবজি বাজারে মাস্ক ব্যবহার করা আর না-করা একই কথা। ভিড় ঠেলাঠেলি করতে গিয়ে মুখে মাস্ক রাখা যায় না।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, সিলেট মহানগর পুলিশের ছয়টি থানা এলাকার মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উদ্যোগে ২০টি তল্লাশিচৌকি স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে নগরের প্রবেশ মুখগুলোতে ৬টি ও নগরের অভ্যন্তরে ১৪টি চৌকি রয়েছে। এ ছাড়া থানা, ফাঁড়ি ও তদন্তকেন্দ্র এলাকাগুলোতে আরও ৮টি তল্লাশিচৌকি করা হয়েছে। মহানগর পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার ২০টি ভ্রাম্যমাণ দল থানা এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। লকডাউন নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালিত হচ্ছে।