Thank you for trying Sticky AMP!!

মাদারীপুরে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৭০০ ছাড়াল

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

মাদারীপুরে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সংক্রমণের প্রথম তিন মাস মাদারীপুরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১২৩। এ সময় করোনায় মারা যান তিনজন। চতুর্থ মাসে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। আজ রোববার জেলায় নতুন করে ৪৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এ নিয়ে চলতি জুন মাসের ২৮ দিনেই শনাক্ত হলেন ৫৮৬ জন। এ মাসে মারাও গেছেন ৮ জন। জেলায় আজকের হিসাব নিয়ে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ৭০৯।

স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৮ মার্চ মাদারীপুর জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর দুই মাসে করোনা শনাক্ত হয় ৫০ জনের। মে মাসে আরও ৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর জুন মাসের ২৮ দিনে শনাক্ত হলেন ৫৮৬ জন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা ছিল ৭০। দ্বিতীয় সপ্তাহে নতুন করে শনাক্ত হন ১৬০ জন। তৃতীয় সপ্তাহে শনাক্ত হন ২৫৫ জন এবং চতুর্থ সপ্তাহে ১০১ জন। সব মিলিয়ে বর্তমানে জেলায় মোট শনাক্ত ৭০৯ জন। এ ছাড়া জেলায় করোনায় প্রথম মৃত্যু ঘটে গত ১৮ মার্চ। এরপর দুই মাসে করোনায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা হয় ৩। আর চলতি মাসের ২৮ দিনে করোনায় মারা গেছেন ৮ জন।

পুলিশ ও সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯ ও ২০ জুন জেলার যেসব ব্যক্তি করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়েছেন, আজ দুপুরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে তাঁদের প্রতিবেদন আসে। ২১৮ জনের প্রাপ্ত রিপোর্টের মধ্যে ৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আজ সবচেয়ে বেশি ৩০ জন শনাক্ত হয়েছেন রাজৈর উপজেলায়। এর মধ্যে রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহানা নাসরিনসহ উপজেলা পরিষদের ৭ জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১ চিকিৎসক ও তাঁর স্ত্রী ও থানার তিন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এ নিয়ে রাজৈর উপজেলায় সংক্রমিত হয়েছেন ২১৯ জন।

এ ছাড়া সদর উপজেলায় আজ এক র‍্যাব সদস্যসহ ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সদরে বর্তমানে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ২৫২, যা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এদিকে, কালকিনি উপজেলায় নতুন ৪ জনসহ এ উপজেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৩০ জন। আজ শিবচর উপজেলায় কেউ করোনা পজিটিভ শনাক্ত হননি।

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ মীর রিয়াজ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, জেলা থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৪৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকার ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮৭৭ জনের প্রতিবেদন এসেছে। এখনো ৬৬৭ জনের প্রতিবেদন অপেক্ষাধীন।

এদিকে, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি খান মো. শহীদ মনে করেন, নাগরিক সুরক্ষায় সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতার অভাবের কারণেই জেলায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। মানুষের কোনো সুরক্ষাব্যবস্থা নেই। চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা নেই। করোনা ঠেকাতে স্বাস্থ্য বিভাগ যতটুকু দায়িত্ব নিয়ে কাজে লাগার কথা, তারা ততটুকু কাজে লাগাতে পারেনি। শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ নয়, জেলা প্রশাসন ও পুলিশেরও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। করোনাকে গুরুত্ব সহকারে না নেওয়ায় আজ এ অবস্থার সৃষ্টি।

করোনা প্রতিরোধ কমিটি কাজের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান নেই জানিয়ে সনাক সভাপতি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে এই কমিটির কাজের ক্ষেত্রটা দৃশ্যমান নয়। তাদের দ্বারা প্রত্যাশা পূরণের জায়গাটা শূন্য। তবে এখনো সবাই এক হয়ে কাজ করলে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।

জানতে চাইলে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন মো. সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংক্রমণ বাড়লেও উল্টোদিকে আজ এক দিনে সর্বোচ্চ ৭২ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হলেন ২৬৫ জন। যাঁরা সুস্থ হয়েছেন, তাঁরা বেশির ভাগই বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ মুহূর্তে মোট আক্রান্ত ৩৮০ জন বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৩ জন।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘জেলায় সংক্রমণ কমাতে আমরা করোনা সংক্রমিত প্রত্যেক ব্যক্তির কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করছি। যাঁরা কন্ট্যাক্টে রয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়াও সংক্রমণ কমাতে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছে।’