Thank you for trying Sticky AMP!!

মাদ্রাসা রক্ষার দাবিতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

লাকসামের দোগাইয়া আশরাফিয়া সুন্নিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার রক্ষা এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলামের অপসারণ দাবিতে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকায় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে তরিকত ফেডারেশনের বিক্ষোভ

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার দোগাইয়া আশরাফিয়া সুন্নিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার জায়গায় গৃহহীনদের জন্য ঘর তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন কুমিল্লা জেলা শাখা। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার দাবিতে এবং এই নির্মাণকাজে ইন্ধনের অভিযোগে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে তারা।

নগরের পদুয়ার বাজার এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তরিকতের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মহাসড়কের উভয় দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তরিকতের নেতা-কর্মীরা মহাসড়কে শুয়ে পড়েন। খবর পেয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহমেদ ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে সড়ক থেকে তাঁদের সরিয়ে দেন।

পরে আন্দোলনকারীরা কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে মাদ্রাসাটি রক্ষার দাবি জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মাদ্রাসার জায়গা ছেড়ে দেওয়া না হলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও লাকসামের ইউএনও এ কে এম সাইফুল আলমের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে তরিকত ফেডারেশন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দোগাইয়া মৌজার বিএস খতিয়ান ১, দাগ নম্বর ৬৪২–এ ১ একর ৪৪ শতক সরকারি খাসজমি আছে। ওই জায়গার ১১ শতকের মধ্যে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের অংশ হিসেবে গৃহহীনদের জন্য পাঁচটি ঘর তোলা হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ঘরের কাজ শুরু হয়। চাঁদপুরী শাহ দরবার শরিফের দোগাইয়া আশরাফিয়া সুন্নিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে মাদ্রাসার জায়গাতেই ঘরগুলো তোলা হচ্ছে। এতে আপত্তি জানালেও প্রশাসন শোনেনি। এ জন্য তরিকত ফেডারেশনের ইঙ্গিত স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও লাকসাম ইউএনওর দিকে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম আজ বেলা আড়াইটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তরিকত ফেডারেশন কেন তাঁর পদত্যাগ চায়, তা তিনি জানেন না। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের না। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, ভূমিহীনদের প্রকল্প।

মন্ত্রী বলেন, ‘ওদের কোনো দাবি থাকলে এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার কাছে আসত, আলোচনা করত। যারা আন্দোলন করেছে, তাদের আমি চিনি না। ওরা আমার নির্বাচিত এলাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এসে মহাসড়কে আন্দোলন করেছে। আমাকে বিভিন্ন সংগঠনের প্রশ্রয়দাতা বলছে। আমি ছোটবেলা থেকে প্রগতিশীল রাজনীতি করে এ পর্যন্ত এসেছি। এখন আমার এলাকার ১০ শতাংশ লোক আমার বিপক্ষে থাকতে পারে। তারা ক্ষুব্ধ হতে পারে। আন্দোলনে লাকসামের কোনো লোক ছিল না। আমি জনকল্যাণমূলক কাজ করছি।’

বিক্ষোভ শেষে মহাসড়কেই সমাবেশ করেন তরিকতের নেতা-কর্মীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা শাখার আহ্বায়ক শাহ মুহাম্মদ কুতুব উদ্দীন বখশী। বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আলী ফারুকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ আলী হোসাইন, সিলেট বিভাগীয় সাংগঠরিক সম্পাদক জাহিদ বাহার, আইনবিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ, যুগ্ম আন্তর্জাতিক সম্পাদক খাজা বাকিবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন কুমিল্লা জেলা শাখার সদস্যসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, মন্ত্রী ও ইউএনওর নির্দেশে মাদ্রাসা এলাকায় ঘর হচ্ছে। এতে মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেউই গৃহহীনদের ঘরের বিরুদ্ধে না, কিন্তু মাদ্রাসা এলাকায় ঘর করতে দেওয়া হবে না। এটা বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর প্রতিষ্ঠান। ২০০ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান। এটি মাদ্রাসার জায়গা। এখানে অন্য কিছু করা যাবে না।

লাকসামের ইউএনও এ কে এম সাইফুল আলম বলেন, ‘ওই জায়গার মালিক জেলা প্রশাসক। এটি ১ নং খাস খতিয়ানের জায়গা। সেখানে এক সপ্তাহ আগে পাঁচটি ঘর তোলা হচ্ছিল। এখন আন্দোলন করায় কাজ স্থগিত করা হয়েছে। আমার অপসারণের কী আছে। সরকার চাইলে আমাকে বদলি করবে।’

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, তরিকতের নেতারা তাঁর কাছে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন তিনি। আপাতত কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।