Thank you for trying Sticky AMP!!

মানুষের জন্য রক্ত জোগাড়ে ছুটে বেড়ান তাঁরা

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক রোগীর জন্য রক্ত দিচ্ছেন গোয়ালন্দ ব্লাড ডোনার ক্লাবের এক সদস্য।

কিছুদিন আগেও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার মানুষ রক্তের প্রয়োজন হলেই বিপাকে পড়তেন। অসুস্থ আপনজনের জন্য রক্ত জোগাড়ে ছুটে বেড়াতেন এখানে–সেখানে। এখন এমন মানুষের রক্ত জোগাড়ে ছুটে বেড়ান একদল তরুণ। যখন যার প্রয়োজন, তখন তার জন্য রক্ত জোগাড় করে দিচ্ছেন তাঁরা। রাতদিন যেকোনো মুহূর্তে রক্ত সংগৃহীত হয়ে যাচ্ছে। শুধু সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সংগঠনটির নাম ‘গোয়ালন্দ ব্লাড ডোনার ক্লাব’।

২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ মাঠে রক্তদানের মধ্য দিয়ে সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথম দিনেই সংগৃহীত হয়েছিল অর্ধশত ব্যাগ রক্ত। রক্তদাতাদের মধ্যে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হায়াতও। স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক ও প্রথম আলো গোয়ালন্দ বন্ধুসভার উপদেষ্টা মো. সেলিম মুন্সীর সহযোগিতায় বন্ধুসভার সদস্য ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হয় সংগঠনটি। ৩০ সদস্য দিয়ে শুরু হলেও কয়েক মাসে সদস্য দেড় হাজার ছাড়িয়েছে।

উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নছর উদ্দিন সরদার পাড়ার আবদুল আজিজ বলেন, তিন মাস আগে বাবা মোকছেদ আলী শেখের (৬৫) ব্রেইন স্ট্রোক হয়। রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায় প্রতি মাসে দুবার রক্ত দিতে হয়। তাঁর এ পজিটিভ রক্তের জন্য গোয়ালন্দ ব্লাড ডোনার ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাই রক্তের ব্যবস্থা করে দেন।

গত বৃহস্পতিবারও জরুরিভাবে মোকছেদ আলীর রক্তের প্রয়োজন পড়ে। সংগঠনটির মাধ্যমে রক্ত দেন দৌলতদিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আবদুল জব্বার কলেজের প্রভাষক ও প্রথম আলো গোয়ালন্দ বন্ধুসভার নারীবিষয়ক সম্পাদক মনা সালেহা। মনা সালেহা বলেন, ১৯৯৯ সালে গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজে ফরিদপুর সন্ধানী ক্লাবের আয়োজনে প্রথম তিনি রক্ত দেন। প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তির রক্ত দেওয়া উচিত।

রাজবাড়ী খানখানাপুর থেকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ বাবার জন্য ও পজিটিভ রক্ত খুঁজছিলেন আলামিন শেখ। শুক্রবার রক্ত কোথাও জোগাড় করতে না পেরে ব্লাড ডোনার ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা তিন ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে দেয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আমীরুল ইসলাম বলেন, দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি যখন–তখন রক্ত সংগ্রহের কাজ করতে হয়। প্রতিদিন ব্লাড ডোনার ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে এখন তিনিও নিয়মিত স্বচ্ছন্দে কাজ করে থাকেন।

আমরা ভালো কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে চাই। আমরা অসহায় মানুষের পাশে থাকতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সংগঠনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে যারা কাজ করছে, তাদের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন।
মো. সেলীম মুন্সী, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, গোয়ালন্দ ব্লাড ডোনার ক্লাব

ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান বলেন, রক্তের চাহিদা অনেক। প্রায়ই রক্ত জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিন দুই-তিন ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে হচ্ছে। শুক্রবার এক দিনে ছয় ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে হয়েছে। রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ঢাকায় গিয়ে রক্ত দিতে হচ্ছে। রক্তদাতাকে সংগঠনের সদস্যপদ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদান ও অন্যান্য সেবাও দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কারও কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়া হয় না। গত ৮ মাসে প্রায় ৫০০ ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সেলীম মুন্সী বলেন, ‘আমরা ভালো কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে চাই। আমরা অসহায় মানুষের পাশে থাকতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সংগঠনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে যারা কাজ করছে, তাদের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন।’