Thank you for trying Sticky AMP!!

মেঘনার চরে এখন বাঙ্গির সুঘ্রাণ

কুমিল্লায় মেঘনার চরে বাঙ্গির খেত

কুমিল্লায় মেঘনা নদীর চরে ছড়িয়ে পড়েছে বাঙ্গির সুঘ্রাণ। কম খরচে চাষাবাদ করে ভালো দামে বাঙ্গি বিক্রি করতে পারায় খুশি মেঘনা উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বাঙ্গিচাষিরা।

গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের মাঠে গিয়ে যত দূর চোখ গেল, শুধু বাঙ্গির দেখাই মিলল। অন্তত পাঁচজন কৃষক বলেন, বর্ষা মৌসুমের পরপর চর থেকে মেঘনার পানি নেমে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষক জমি তৈরি করে বাঙ্গির বীজ বপন করেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মেঘনা উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। মার্চ মাসের শুরু থেকে বাঙ্গি তোলা শুরু হয়। মার্চ মাসজুড়ে ফসল তোলা হবে।

মেঘনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসা. সেলিমা খাতুন বলেন, বেলে-পলি মাটিতে বাঙ্গির আবাদ ভালো হয়। আর এ কারণে মেঘনার চরাঞ্চলের কৃষকেরা বাঙ্গি চাষে সফল হয়েছেন।

বিনোদপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি চলতি মৌসুমে ৭৫ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। গত কয়েক দিনে তিনি এক লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেছেন। তাঁর আশা, কমপক্ষে আরও ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন তিনি। একই গ্রামের কৃষক আনু মিয়া বলেন, চলতি বছর তিনি ১৮০ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৩২ হাজার টাকার বাঙ্গি। আরও ১ লাখ ৩২ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, বর্তমানে এক পাতি বাঙ্গির (প্রতি পাতিতে ২০ থেকে ৩৫টি) পাইকারি দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা। এটি অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। মেঘনা নদীর পলি মাটির কারণে একই জমিতে বছরের পর বছর বাঙ্গি চাষ করলেও ফলন একই রকম থাকে।

কৃষক আমান উল্লাহ বলেন, চলতি বছর দাউদকান্দির টামটা গ্রামের মাঠে কৃষকেরা বাঙ্গির পরিবর্তে টমেটোর আবাদ করায় তাঁরা বাঙ্গির চড়া দাম পেয়েছেন। দাউদকান্দি, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ীরা খেত থেকে পাইকারি দামে বাঙ্গি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাঙ্গি কিনতে আসা মুন্সিগঞ্জ সদরের ব্যবসায়ী আবদুল হক, আলী আকবর, আবজাল, তোফাজ্জল হোসেন, আল-আমিন ও স্বপন বলেন, মেঘনা চরের বাঙ্গি নদীপথে যেকোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া সহজ। তাই বাঙ্গি কিনতে তাঁরা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে সরাসরি এই চরে চলে আসেন।

কৃষি কার্যালয়সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাঙ্গিগাছ দেখতে অনেকটা শসাগাছের মতো লতানো। কাঁচা ফলের রং সবুজাভ। কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। ফল পাকলে হলুদাভ হয়। পাকা বাঙ্গির সুমিষ্ট সৌরভ আছে। একেকটি ফলের ওজন এক থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। দেশে প্রধানত দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়, বেলে ও এঁটেল বাঙ্গি। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা। শাঁস খেতে বালি বালি লাগে, তেমন মিষ্টি নয়। অন্যদিকে এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত এবং তুলনামূলকভাবে বেশি মিষ্টি। অন্যান্য এলাকার বাঙ্গি লম্বাটে হলেও মেঘনার চরের জাত গোলাকার। দেখতে অনেকটা মিষ্টিকুমড়ার মতো। এ প্রজাতির বীজ চীন থেকে এসেছে বলে স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কার্যালয় এই বাঙ্গির নাম দিয়েছেন চীনা বাঙ্গি।

কম খরচে চাষাবাদ করে ভালো দামে বাঙ্গি বিক্রি করতে পারায় খুশি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বাঙ্গিচাষিরা

‘বাঙলার ফল’ বইয়ে আমিরুল আলম খান উল্লেখ করেছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম বাঙ্গি থেকে ২৫ ক্যালরি পাওয়া যায়।

মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল হোসেন বলেন, বাঙ্গি কমবেশি সবাই খেতে পারেন। আর মেঘনার চরের বাঙ্গি খেতে খুবই সুস্বাদু।