Thank you for trying Sticky AMP!!

মেঘনায় ইলিশ মিলছে হাতে গোনা

গত সোমবার রাত ১০টায় মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যান জেলে শাহাজালাল দেওয়ান। তাঁর সহযোগী ছিলেন আরও ১৪ জন জেলে। সবার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর বংশী গ্রামে। মেঘনার হাইমচর এলাকায় দুবার জাল ফেলেন। সাত ঘণ্টা পর ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ছোট ছোট ইলিশ মেলে চারটি। এতে মন ভালো নেই তাঁদের।

জেলে শাহাজালাল দেওয়ান বলেন, জেলেদের মজুরি বাদে ইঞ্জিনচালিত নৌকার জ্বালানিসহ পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু চারটি ইলিশ বিক্রি হয় এক হাজার টাকায়। এতে ব্যয়ের চার হাজার টাকাই ওঠেনি।

জাটকানিধন বন্ধে মেঘনা নদীতে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষে ৩০ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে আবার মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। কিন্তু গত সাত দিনেও কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে হতাশ লক্ষ্মীপুর জেলার জেলেরা।

জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেন।

এ জন্য ওই এলাকায় সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধ করে সরকার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় প্রশাসন ১ মার্চ থেকে মেঘনায় সব ধরনের জাল ফেলা বন্ধ করে দেয়।

লক্ষ্মীপুর জেলায় ৫০ হাজার ২৫২ জন জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে নদীতে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত ৪৯ হাজার জেলে। তাঁদের একমাত্র পেশাই মাছ ধরা।

ইলিশ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

স্থানীয় জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞা থাকায় দুই মাস সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন তাঁরা। মাছ ধরাই একমাত্র পেশা হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার দিনগুলোতে অলস সময় পার করতে হয়েছে তাঁদের। ফের মাছ ধরা শুরু হয়েছে; আশা করছেন এবারও প্রচুর মাছ ধরা পড়বে। কিন্তু তাঁরা নদীতে নেমে হতাশ হয়েছেন।

সদর উপজেলার চর রমনী গ্রামের জেলে মহিউদ্দিন বলেন, নদীতে তেমন ইলিশ মিলছে না। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত জাল ফেলে ২-১ হাজার টাকার বেশি ইলিশ উঠছে না জালে। এতে তাঁদের লাভের চেয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে বেশি।

গতকাল মঙ্গলবার রায়পুর উপজেলার হাজীমারা মাছ ঘটে গিয়ে আড়তদার মো. লিটন ও জেলে সুলতান মিয়া সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর দুই মাস বন্ধের পর লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় জেলেদের মাছ শিকারের উৎসব শুরু হয়। শত শত নৌকায় জেলেরা ছোটেন মেঘনায়। ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে জেলেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঘাটে বেড়ে যায় ক্রেতা-বিক্রেতা। জেলেপল্লিতে শুরু হয় আনন্দ উৎসব। কিন্তু এবারের চিত্র উল্টো। সাত দিন অতিবাহিত হলে নদীতে মাছ পাচ্ছেন না তাঁরা।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী গ্রামের মাছের আড়তদার নজরুল ইসলাম বলেন, বিগত বছর মাছের ঘাটগুলো থেকে এ সময়ে প্রতিদিন ২০-৩০ টন ইলিশ দেশের বাজারে সরবরাহ করা হতো। অথচ গত সাত দিনে ১ টন ইলিশও সরবরাহ করতে পারেননি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, অর্ধলক্ষাধিক জেলে দুই মাস বেকার ছিলেন। তাঁরা নদীতে নেমে মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। তবে নদীতে পানি বাড়লে ও ভারী বৃষ্টি হলে ইলিশ বেশি ধরা পড়বে বলে তিনি আশাবাদী।